করোনা ভ্যাকসিনকে একটি বৈশ্বিক সর্বসাধারণের সামগ্রী হিসেবে ঘোষণা করতে গত জুন মাসে মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বব্যাপী এক প্রচারাভিযান শুরু করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ২৪ জন নোবেল বিজয়ী এবং ১২৫ জন সাবেক প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বরা একাজে তার সাথে সমবেত হয়েছেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
আসন্ন ইউরোপীয় রাষ্ট্রপ্রধানদের ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন সম্মেলন, দ্য টিআরআইপিএস সম্মেলন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা সম্মেলন ও আফ্রিকান ইউনিয়ন সম্মেলনকে সামনে রেখে অধ্যাপক ইউনূসের শুরু করা এই পিটিশনে ৯,১৩,৪৫৩ মানুষ স্বাক্ষর করেছেন।
আভাজের সমর্থনে চলা এ প্রচারাভিযানে সরকার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানদেরকে করোনা ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা প্রযুক্তিকে এর কারিগরি বিষয়গুলো শেয়ার করার মাধ্যমে ও এগুলোকে বুদ্ধিবৃত্তিক মালিকানা সংক্রান্ত বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত রেখে এই ভ্যাকসিনকে পৃথিবীর সর্বত্র সহজলভ্য করার আবেদন জানিয়েছেন।
বিশ্বব্যাপী আভাজের প্রচারিত এই পিটিশনে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে স্বেচ্ছামূলকভাবে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক মালিকানা ও প্রযুক্তি হস্তান্তর করার মাধ্যমে এই ভ্যাকসিনকে পৃথিবীর সর্বত্র, সবচেয়ে কম খরচে ও সবচেয়ে কম সময়ে সকল মানুষের জন্য সহজলভ্য করার জন্য আহ্বান জানান হয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকার ধনী দেশগুলো এরই মধ্যে এই ভ্যাকসিনের বৈশ্বিক সরবরাহের প্রায় সবটাই তাদের জনগণের স্বার্থে তাদের নিজেদের দখলে নিয়ে গেছে এবং এর ফলে নিম্ন আয়ের দেশগুলো ভ্যাকসিন পাবার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে পড়েছে।
এর ফলে কোভ্যাক্সের মতো প্রশংসনীয় উদ্যোগের মাধ্যমেও বর্তমান পদ্ধতিতেও ২০২১ সালের শেষে পৃথিবীর সর্বত্র এই ভ্যাকসিন পৌঁছানো যাবে না, বলেন তিনি।
ইউনূস আরও বলেন, সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হলে সকল দেশকে জরুরিভিত্তিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার সামগ্রীসমূহ সংগ্রহ করতে হবে, সর্বনিম্ন খরচে সকলের জন্য কার্যকর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণদের যেমন-স্বাস্থ্যকর্মী ও বয়স্কদেরকে যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন দিতে হবে।
এজন্য প্রায় ১০০টি দেশ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ও এর চিকিৎসা প্রযুক্তির প্যাটেন্ট ও বুদ্ধিবৃত্তিক মালিকানার উপর একটি ব্যাপক-ভিত্তিক সাধারণ স্বত্বত্যাগ জারি করতে এ মাসে ডব্লিউটিও একটি প্রস্তাবে সমর্থন দিতে যাচ্ছে।
এই প্রস্তাবের কো-স্পন্সর হলো এইচআইভি/এইডস মহামারিতে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত ও বিপুল মানুষ প্রাণহানির দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা।
কোভিড ভ্যাকসিনকে প্যাটেন্ট-মুক্ত করতে একটি বাধ্যতামূলক চুক্তি এই ভ্যাকসিন বৈশ্বিক সর্বসাধারণের এক সামগ্রী এই বার্তা পরিষ্কারভাবে পৌঁছে দিয়ে পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে দিতে পারে।
নোবেল বিজয়ী ইউনূসের এই উদ্যোগ যে বিষয়টির উপর জোর দেয়া হচ্ছে তা হলো মানুষের জীবন রক্ষার মতো একটি মৌলিক প্রশ্নে কোনো উত্তর-দক্ষিণ বিভাজন কাম্য নয়। বিশেষত যেসব দেশে পৃথিবীর জনসংখ্যার বড় অংশ বাস করে।
এখন সময় এসেছে জি-২০ নেতাদের এটা প্রমাণ করা যে, কাউকে পেছনে ফেলে না রাখতে ত্রুটিহীন চেষ্টা করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ডব্লিউটিওতে উত্থাপিত প্রস্তাবটির সমর্থনে তাদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।