বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, এই সেতুর কারণে জাতীয়, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়বে। এশীয় হাইওয়ের সঙ্গেও যুক্ত হবে সেতুটি। এটি চালু হলে জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত হবে দক্ষিণ বাংলার অর্থনীতি।
এই সেতু ঘিরে দুই পাড়ে নির্মাণকাজ বাড়বে ২৯ শতাংশ। এ অঞ্চলের কৃষিতে সাড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। পাশাপাশি পরিবহন খাতে কাজ বাড়বে ৮ শতাংশ। এর প্রভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ কোটি লোকের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি হবে। ফলে পদ্মা নদীর ওপারে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দারিদ্র্যের হার কমবে ১ শতাংশ। ওই অঞ্চলে দারিদ্র্য কমলে এর প্রভাব পড়বে সারা দেশে। তখন জাতীয়ভাবে দারিদ্র্যের হার কমবে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ একাধিক সংস্থার গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।
জানা যায়, যমুনার ওপর দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারের এই সেতু উত্তরের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ সহজ করে। ফলে বগুড়া বা রংপুরের কৃষক সকালে ক্ষেত থেকে যে সব্জি তোলেন, মধ্যরাতে তা ঢাকায় পৌঁছায়। রাজশাহীর মৎস্যচাষীদের তাজা রুই মাছ রাজধানীর বাজারে বাজারে বিক্রি হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে উত্তরের মতো ফসলের বাড়তি দাম পাওয়া যাবে বলে মনে করেন দক্ষিণের কৃষকেরা। তাদের এই আশার দিকটি উঠে এসেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) গত মে মাসের এক সমীক্ষায়।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ২০০৯ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগের অর্থনৈতিক প্রভাব বা ইকোনমিক রেট অব রিটার্ন (ইআরআর) দাঁড়াবে বছরে ১৮ থেকে ২২ শতাংশ। পরবর্তী সময়ে সেটা বাড়তে পারে।
পদ্মার ওপারে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৬ জেলা, ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, পোপালগঞ্জসহ মোট ২১ জেলার ৩ কোটি মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে। বদলে যাব দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার অর্থনৈতিক চিত্র। ইতোমধ্যেই এ অঞ্চলে বেসরকারি বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা জাজিরা প্রান্ত থেকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ঘিরে এবং আশপাশের এলাকায় জমি কিনতে শুরু করেছেন। ফলে জমির দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে বছরে গড়ে যানবাহন চলাচল করবে প্রায় ৩৫ হাজার। এ থেকে রাজস্ব আয় হবে ৮২২ কোটি টাকা। ২০২৫ সালে তা বেড়ে ৩৯ হাজারে দাঁড়াবে। রাজস্ব আয় হবে প্রায় হাজার কোটি টাকা। ২০৩০ সালে তা আরও বেড়ে ৫৮ হাজারে যানবাহন চলবে।
রাজস্ব আয় হবে ১ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। ২০৩৫ সালে তা আরও বেড়ে ৬৬ হাজার যানবাহন এবং রাজস্ব আয় হবে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। এভাবে ২০৫০ সালে যানবাহনের সংখ্যা বাড়বে ৭৬ হাজার। রাজস্ব আয় বাড়বে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ সংশোধিত ব্যয় অনুযায়ী সেতু নির্মাণে মোট খরচ হবে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। আগামী ২০২২ সালের জুনে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হতে পারে। পদ্মা রেল সেতুর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। পদ্মা সড়ক সেতুতে যে অর্থ বিনিয়োগ হবে তার বিপরীতে মুনাফার হার বছরে দাঁড়াবে ১৯ শতাংশ। বাংলাদেশে সাধারণত বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফার হার ১৫ শতাংশ। পদ্মা সেতুতে এ হার বেশি হওয়ার কারণ হচ্ছে, এটি বহুল ব্যবহৃত একটি অবকাঠামো হবে। যে কারণে এ থেকে রাজস্ব আয় ২০৫০ সাল পর্যন্ত বাড়তে থাকবে।