এ বিষয়ে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে। অবিলম্বে বলতে যেদিন সার্কুলারটি জারি করা হয় ওইদিন থেকে কার্যকর বলে ধরা হয়।
আগের নীতিমালায় বলা হয়েছিল, বিশেষ সুবিধায় ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে যেসব গ্রাহক খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছেন তারা অন্য কোনো সুবিধা পাবেন না বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সার্কুলারে তাদের করোনাকালীন সুবিধাগুলো দেয়া হয়েছে।
জারি করা সার্কুলারে বলা হয়, করোনার প্রভাবে সামগ্রিক ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন প্রায় সব ধরনের ব্যবসায়ীরা। বিশেষ সুবিধার আওতায় ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে যারা খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছেন তারাও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে করোনাকালীন সময়ে ঋণগ্রহীতাদের যেসব সুবিধা দেয়া হয়েছে সেগুলো তাদের ক্ষেত্রে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এ সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। সমুদয় ক্ষেত্রে এ সুবিধা পাওয়া যাবে না।
সূত্র জানায়, বিশেষ সুবিধায় বড় অংকের খেলাপি ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এগুলোর সবই মেয়াদি ঋণ। যে কারণে ওইসব ঋণের মধ্যে যে অংশ বা কিস্তি ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর মধ্যে পরিশোধের কথা ছিল শুধু সে অংশ বা কিস্তি স্থগিত হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে এক্সিটের সুবিধা ৬ মাসের বেশি হওয়া যাবে না।
অর্থাৎ কোনো ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ মার্চে থাকলে তিনি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ সুবিধা পাবেন। জুনে থাকলে তিনি ডিসেম্বর পর্যন্ত পাবেন। তবে কোনো ক্রমেই ৩১ ডিসেম্বরের পর এ সুবিধা পাওয়া যাবে না। সেক্ষত্রে যাদের কিস্তি পরিশোধের সময় জুলাইয়ের পর ছিল তারা ৬ মাসেরও কম সময় পাবেন।
সূত্র জানায়, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধের সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি বহাল থাকবে। এর পর ১ জানুয়ারি থেকে যেসব ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় আসবে তার মধ্যে পরিশোধ করা হলে ৬ মাস থেকে ৯ মাসের মধ্যে তা খেলাপি হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ জানুয়ারিতে কোনো ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় থাকলে এবং তা পরিশোধিত না হলে আগামী জুন থেকে সেপ্টেম্বরের পর ওইসব ঋণ খেলাপি হবে।
করোনাকালীন ঋণ শ্রেণিকরণের সার্কুলার অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব ধরনের গ্রাহকদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত থাকবে। একই সঙ্গে এ সময়ে ঋণের কিস্তি বা ঋণ পরিশোধ করতে না পারার কারণে কোনো গ্রাহকের ঋণকে খেলাপি করা যাবে না। তবে কোনো গ্রাহক আগের খেলাপি ঋণ পরিশোধ করলে সেগুলো নিয়মিত করা যাবে।
সার্কুলারে বলা হয়, চলমান ও তলবি ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১২ মাস বা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এর মধ্যে যেটি আগে হয় সে পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। কোনো ক্রমেই কোনো ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বরের পর পর্যন্ত বাড়ানো যাবে না। চলতি বা তলবি ঋণের মেয়াদ কম বলে এক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
আলোচ্য সময়ে কোনো ঋণের বিপরীতে সুদ নগদ আদায় হলে তা ব্যাংক আয় খাতে নিতে পারবে। কিন্তু কোনো সুদ নগদ আকারে আদায় না হলে কোনো সুদ বা মুনাফা ব্যাংক আয় খাতে নিতে পারবে না। ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো ঋণের বিপরীতে দণ্ড সুদ বা কোনো ধরনের বাড়তি ফি আরোপ করা যাবে না।
কোনো গ্রাহক এ ঋণ পরিশোধের সুবিধা নিতে না চাইলে ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে আগের নিয়মে ঋণ সমন্বয় করতে পারবেন। ওই সময়ে গ্রাহক এ সুবিধা গ্রহণ না করে আগের নিয়মে ঋণ পরিশোধ করলে গ্রাহককে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সুদ ছাড় সুবিধা দিতে হবে।
করোনার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে এর আগেও তিন দফা সার্কুলার জারি করে ঋণের কিস্তি পরিশোধ ও ঋণ খেলাপি না করার সময় সীমা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাবে দেশের ও বিশ্ব ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়লে ১৯ মার্চ প্রথম কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলার জারি করে ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণ ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত এবং এ কারণে কোনো ঋণকে খেলাপি না করার নির্দেশনা জারি করে। পরে দ্বিতীয় দফায় এর মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তৃতীয় দফায় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের গ্রাহকরা এ সুবিধা পাবেন।