গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপসাগরীয় ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের লোকসানের পরিমাণ ৫ হাজার কোটি থেকে ৬ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মধ্যে হোটেলগুলোর লোকসান থাকবে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। অথচ গত পাঁচ বছরে মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশের জোট উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিল বা জিসিসির পর্যটন ও ভ্রমণ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ১০ শতাংশ। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে পর্যটন থেকে ১১ হাজার কোটি ডলার আয়ের প্রত্যাশা করছিল তারা। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাস মহামারী সবকিছু নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছে।
ফ্রস্ট অ্যান্ড সুলিভান বলেছে, বিশ্বজুড়ে লকডাউনের পর ভ্রমণের জন্য গ্রাহকরা যখন বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন, তখন তারা অবশ্যই হোটেলে থাকার বিলাসিতা বেছে নেবেন। তবে তারা তাদের পরিবারের বাইরে অন্য অতিথিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে চাইবেন। এজন্য শিল্পটি নতুনভাবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ খাতের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা মূল বিষয়গুলো অনুধাবন করতে পেরেছেন এবং নতুনভাবে পরিষেবা সরবরাহে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।
পরামর্শক সংস্থাটি জানিয়েছে, ভোক্তা অভিজ্ঞতা অনুধাবন এবং প্রতিটি পর্যায়ে নতুনত্ব নিয়ে আসার বিষয়গুলো আগামীতে গুরুত্ব পাবে। দুবাই ধীরে ধীরে পর্যটন খাতের কার্যক্রম চালু করেছে এবং আবুধাবি গত মাসের শেষ সপ্তাহে আন্তর্জাতিক পর্যটক প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ছড়িয়ে যাওয়ার পর গত ২০ ডিসেম্বর সৌদি আরব আবারো তার আকাশপথ, স্থল ও সমুদ্রপথ বন্ধ করে দিয়েছিল। সর্বশেষ গতকাল দেশটি তার সীমান্তগুলো খুলে দিয়েছে। এর আগে ওমান ২৯ ডিসেম্বর পর্যটকদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়।
গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, গত বছরে দীর্ঘ সময় ধরে বেশির ভাগ দেশ আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীদের থেকে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ায় সৌদি আরবের নেতৃত্বে উপসাগরীয় দেশগুলোয় অভ্যন্তরীণ পর্যটক বাড়ছে। এ অঞ্চলের সব হোটেল বায়ো-বাবলের আওতায় ধারণক্ষমতার ৬৫ শতাংশ পর্যটক গ্রহণ করবে। বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করতে বায়ো-বাবল একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশ সরবরাহ করে।
প্রতিবেদনটিতে উদাহরণ হিসেবে আইপিএল টুর্নামেন্টের কথা বলা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত এ টি২০ টুর্নামেন্টে বায়ো-বাবল অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ৩০০-এরও অধিক অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে তিনটি শহরে টুর্নামেন্টের ২৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হলেও কোনো কভিড-১৯ সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি।
ফ্রস্ট অ্যান্ড সুলিভান জানিয়েছে, বর্তমানে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের অন্তর্ভুক্ত রেস্তোরাঁ ব্যবসা পরিবর্তিত হচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে শুধু ডেলিভারিভিত্তিক রেস্তোরাঁ ক্লাউড কিচেনের বৈশ্বিক বাজার ১ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। পর্যটকদের রেস্তোরাঁসহ জনাকীর্ণ পরিবেশ এড়িয়ে বাসা থেকে অর্ডার করে খাবার নিয়ে আসা নতুন স্বাভাবিক (নিউ নরমাল) চর্চা হতে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে বাসায় খাদ্য সরবরাহকারী কিচেনের সংখ্যা আরো বাড়বে, যারা হয়তো তৃতীয় পক্ষের কোনো ডেলিভারির মাধ্যমে খাবার সরবরাহ করে দেবে। এতে উপসাগরীয় দেশগুলোয় ঘরের বাইরে খাওয়ার যে রমরমা সংস্কৃতি ছিল, তা সংকুচিত হয়ে যাবে। রেস্টুরেন্টগুলোও তাদের সেবায় অনেক পরিবর্তন আনবে।