সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মহামারীজনিত চলমান জরুরি অবস্থার অধীনে ভোক্তাব্যয় এখনো নিম্নস্তরে রয়েছে। ফলে অর্থনীতির কিছু খাত দুর্বল অবস্থায় রয়ে গেছে। ফেব্রুয়ারিতে মন্ত্রিপরিষদ অফিস তার মাসিক প্রতিবেদনে অর্থনীতির সামগ্রিক পরিস্থিতি বর্ণনা করে বলেছে, জাপানের অর্থনীতির কিছু খাত এখনো বেশ দুর্বল। মহামারীজনিত কারণে এটি মারাত্মক পরিস্থিতিতে রয়ে গেছে। যদিও এটি উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
এর আগের মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, অর্থনীতি এখনো একটি মারাত্মক পরিস্থিতিতে রয়েছে। তবে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। টানা তৃতীয় মাসে এসে ভোক্তাদের ব্যয় সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি সংশোধন করে নিম্নগামীর বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ অফিস বলেছিল, সম্প্রতি ভোক্তাব্যয় দুর্বল হয়েছে। জানুয়ারিতে অফিস বলেছিল, ব্যক্তিগত ব্যয়ের উন্নতি থমকে আছে বলে মনে হচ্ছে।
মহামারীর প্রভাবে এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো ২০২০ সালে জাপানের অর্থনীতি ৪ দশমিক ৮ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। অবশ্য বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসের তুলনায় এ সংকোচনের মাত্রা কিছুটা কমই ছিল। বিশেষ করে ব্যাপক হারে সরকারের প্রণোদনা এবং বছরের শেষদিকে এসে রফতানিতে চাঙ্গা ভাব জাপানকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ভাইরাসের নতুন ঢেউ ঠেকাতে সরকারের আরোপিত চলমান কঠোর বিধিনিষেধের কারণে অভ্যন্তরীণ ভোক্তাব্যয় আরো হ্রাস পাবে। এছাড়া নির্ধারিত সময়ের ছয় মাসেরও কম সময় আগে এসে টোকিও গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক স্থগিত হয়ে যাওয়া এবং পর্যটকদের জন্য সীমান্ত বন্ধ রাখার কারণে চলতি বছরটি জাপানের অর্থনীতি ততটা মসৃণ হবে না।
নভেম্বরের মাঝামাঝিতে পুনরায় সংক্রমণ দেখা দেয়ায় সরকার জানুয়ারিতে টোকিও মহানগরীয় অঞ্চল এবং অন্যান্য অঞ্চলজুড়ে দ্বিতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল। নতুন নির্দেশনার আওতায় দ্রুত বন্ধ না করলে বার ও রেস্তোরাঁকে জরিমানা গুনতে হবে। চলমান এ নিষেধাজ্ঞা আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রবণতার কথা যখন ভাবা হচ্ছে, তখন ২০২১ সালের শুরুতে অর্থনৈতিক ঝুঁকি প্রকট হচ্ছে।
সুমি ট্রাস্টের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ নায়োয়া অশিকুবো বলেন, জাপানের বেশ কয়েকটি জেলায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হ্রাসের সম্ভাবনা এড়ানো যাবে বলে মনে হয় না।
একজন সরকারি কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, বর্ধিত জরুরি অবস্থার মধ্য থেকে অনেক বেশি লোক বাইরে যাওয়া থেকে বিরত ছিল বলে মনে করা হয়। যে কারণে ব্যয় প্রভাবিত হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এক্ষেত্রে বিশেষত খাবার খাওয়া এবং অন্যান্য পরিষেবা খাতে ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। সংক্রমণের বিস্তারটি তার গতিবেগ হারাতে পারে বলে মনে হচ্ছে। তাই ভবিষ্যতের দিকে তাকালে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তেমন খারাপ দেখায় না।
সরকার সর্বশেষ গত এপ্রিলে প্রথম ভাইরাসজনিত জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর দেশীয় অর্থনীতি নিয়ে তার মূল্যায়ন হ্রাস করেছিল। মে মাস পর্যন্ত দেশজুড়ে এ জরুরি অবস্থা অর্থনীতিকে রেকর্ড মন্দায় ভুগতে বাধ্য করেছিল।
মাসিক প্রতিবেদনে জাপান পর পর দুই মাস মূলধন ব্যয়ের মূল্যায়ন বাড়িয়ে বলেছে, সম্প্রতি এ খাতে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। গত মাসে মন্ত্রিপরিষদ অফিস বলেছিল, ব্যবসায়িক বিনিয়োগ সমতল হতে শুরু করেছে। করপোরেট মুনাফা ও আমদানি মূল্যায়নও বেড়েছিল। অফিস অন্য বড় উপাদানগুলোর বিষয়ে মতামত অপরিবর্তিত রেখে বলেছে, রফতানি ও শিল্প উৎপাদন বাড়ছে। সূত্র মাইনিচি।