সিটিও ফোরাম নিয়ে হঠাৎ এমন চিঠিতে ব্যাংকগুলোতে একধরনের অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। কারণ, প্রায় সব ব্যাংকের প্রযুক্তি কর্মকর্তারা এই ফোরামের সদস্য। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা এই ফোরামের সঙ্গে যুক্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১২ সালে এই ফোরাম গড়ে উঠেছিল। দেশের ব্যাংক, আর্থিক খাত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আইটি বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তাদের সংগঠন সিটিও ফোরাম বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু আমরা জানি না।
ব্যাংকগুলোতে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি (বিজিডি ইন-গভ-সিআইআরটি) স্মারকের মাধ্যমে জানায়, ডিবিসি টেলিভিশনের ‘টালিখাতা’ নামক অনুষ্ঠানে ব্যাংকগুলোর সাইবার হ্যাকিং প্রতিরোধে গৃহীত ব্যবস্থা ও সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ে আলোচনায় সিটিও ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দেওয়া বক্তব্য অসত্য। তিনি ব্যাংকগুলোর সাইবার হ্যাকিং প্রতিরোধে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিয়ে কথা বলেন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক পরিহার করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে সুপারিশ করে সরকারের এই দুই সংস্থা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিঠি দিয়ে জানায়, সিটিও ফোরাম বাংলাদেশ সংগঠন থেকে সব ধরনের সংশ্লিষ্টতা পরিহার করতে হবে। এ ছাড়া সিটিও ফোরাম বাংলাদেশ সংগঠনের সঙ্গে সব ধরনের সংশ্লিষ্টতা পরিহার করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তালিকা এবং ১৩ মার্চের মধ্যে কোনো কর্মকর্তা সিটিও ফোরাম বাংলাদেশের সদস্যপদ বা কোনো কমিটির সদস্য হিসেবে সংশ্লিষ্টতা নেই মর্মে প্রত্যয়নসহ ইনফরমেশন সিস্টেমস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট বিভাগে জানাতে হবে।
জানতে চাইলে সিটিও ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তপন কান্তি সরকার বলেন,আমি বুঝতে পারছি না। আর আমার এক বক্তব্যে পুরো সিটিও ফোরাম কেন নিষিদ্ধ হবে? সরকারের একটি সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, পাঁচটি ব্যাংকে হামলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলেছি, এসব প্রতিষ্ঠানের সাইবার হামলা মোকাবিলায় সক্ষমতার ঘাটতি আছে। এতে অন্যায় কী হলো, আমি বুঝতে পারছি না। আর আমার এক বক্তব্যে পুরো সিটিও ফোরাম কেন নিষিদ্ধ হবে?
দেশের ব্যাংক, আর্থিক খাত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আইটি বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তাদের সংগঠন হলো সিটিও ফোরাম বাংলাদেশ। বর্তমানে সিটিও ফোরামের সদস্য প্রায় ৪০০। ২০১২ সালে সিটিও ফোরাম কার্যক্রম শুরু করে।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার কারণে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। একজনের বক্তব্যের কারণে কোনো সংগঠন নিষিদ্ধ হতে পারে না। ফোরামটি সভাপতির একার না, অনেকেই এর সঙ্গে যুক্ত।
প্রসঙ্গত, গত ১ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনফরমেশন সিস্টেমস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট বিভাগের সিস্টেম অ্যানালিস্ট (যুগ্ম পরিচালক) এস এম তোফায়েল আহমাদের সই করা এক চিঠিতে দেশের সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের বলা হয়— আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদেরকে ‘সিটিও ফোরাম বাংলাদেশ’ সংগঠন থেকে সব ধরনের সংশ্লিষ্টতা পরিহার করতে হবে। এছাড়া সিটিও ফোরাম বাংলাদেশ সংগঠনের সঙ্গে সব ধরনের সংশ্লিষ্টতা পরিহার করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তালিকা এবং আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে আপনার প্রতিষ্ঠানের কোনও কর্মকর্তা সিটিও ফোরাম বাংলাদেশের সদস্য পদ বা কোনও কমিটির সদস্য হিসেবে সংশ্লিষ্টতা নেই মর্মে প্রত্যয়নসহ ইনফরমেশন সিস্টেমস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট বিভাগে জানানোর অনুরোধ জানানো হলো।