সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে বেশির ভাগ দেশই গত বছরজুড়ে লকডাউনসহ নানা বিধিনিষেধের মধ্যে ছিল। বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল সীমান্ত। থমকে গিয়েছিল অর্থনৈতিক কার্যক্রম। তবে প্রথম কয়েক মাসের মধ্যে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এনে ব্যবসা-বাণিজ্যকে পুরোপুরি সচল করে তুলেছিল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ অর্থনীতি। এটিই দেশটির রফতানি বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
গতকাল প্রকাশিত সরকারি তথ্যে দেখা যায়, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়কালে চীনের রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬০ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। এটি বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার চেয়েও অনেক উপরে রয়েছে। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনো নানা বিধি-নিষেধ অব্যাহত থাকায় আমদানি বৃদ্ধির হারে শ্লথগতি দেখা গেছে।
শুল্ক বিভাগের সর্বশেষ এ পরিসংখ্যান গত বছরের আমদানি-রফতানির প্রবণতার সম্পূর্ণ বিপরীত। গত বছর যেখানে দেশটির রফতানি প্রায় ১৭ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল, সেখানে আমদানি কমেছিল মাত্র ৪ শতাংশ। অর্থাৎ মহামারীজনিত বিধিনিষেধে চীনের রফতানি প্রভাবিত হলেও আমদানির ওপর খুব কমই প্রভাব দেখা গিয়েছিল। যদিও নতুন পরিসংখ্যানে উল্টো চিত্র ফুটে উঠেছে।
দেশটির শুল্ক প্রশাসন জানিয়েছে, সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত বছরের চেয়ে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ব্যবসায়িক কার্যক্রম অনেক বেশি শক্তিশালী। এ সময়কালে ইলেকট্রনিকস পণ্যগুলোর রফতানি বেড়েছে ৫৪ দশমিক ১ শতাংশ। যেখানে মাস্কসহ টেক্সটাইল রফতানি ৫০ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। সামগ্রিকভাবে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ১০ হাজার ৩৩০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। যেখানে গত বছরের একই সময়ে দেশটি ৭১০ কোটি ডলার বাণিজ্য ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছিল।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে বাণিজ্যযুদ্ধ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রফতানি বেড়েছে। গত দুই মাসে দেশটিতে চীনের রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার ৫০ কোটি ডলারে পৌঁছেছিল।
অন্যান্য বছর দেশটির চান্দ্র নববর্ষের ছুটিতে আমদানি-রফতানি ও উৎপাদন কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়ে। তবে রোববার কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘অফ-সিজন’ সত্ত্বেও চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের ডাটা শক্তিশালী ছিল।
ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও চলতি বছর ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় অর্থনীতিতে উৎপাদন ও ভোক্তা ব্যয় পুনরুদ্ধার হয়েছে। পাশাপাশি চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারেও ভোক্তা ব্যয় বেড়েছে। আর এগুলো দেশটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম বিস্তৃত করতে সহায়তা করে। যদিও প্রতি বছর চান্দ্র নববর্ষের ছুটিতে নাগরিকরা তাদের নিজ শহরে ফিরে যায় এবং পরিবারের সঙ্গে ছুটি উদযাপন করে। তবে কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে চীনা কর্তৃপক্ষ ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করেছিল। ফলে ছুটির মৌসুমেও দেশটির উৎপাদন খাত চলমান ছিল।
শুল্ক প্রশাসনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুয়াংডং ও ঝেজিয়াংয়ের মতো বড় বৈদেশিক বাণিজ্য প্রদেশের অনেক কারখানা চান্দ্র নববর্ষের ছুটিতেও উৎপাদন বজায় রেখেছিল।
আগামী সময়ে বাজারের চাহিদা আরো বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। কিছু সংস্থা আবার ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, আয়রন আকরিক ও অপরিশোধিত তেলের মজুদ বাড়াতে আমদানি করেছে। তবে কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্য স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে এখনো দীর্ঘ পথ বাকি রয়েছে। খবর এএফপি।