'জনগণের জানমাল, সম্পদ রক্ষার্থে কঠোর সরকার'

'জনগণের জানমাল, সম্পদ রক্ষার্থে কঠোর সরকার'
জাতীয় ক্ষয়ক্ষতি সব প্রকার উশৃঙ্খলতা বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। অন্যথায় জনগণের জানমাল, সম্পদ রক্ষার্থে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে।’ রোববার (২৮ মার্চ) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনগুলো সম্পৃক্ত হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করে আসছিল হেফাজতে ইসলাম। আন্দোলনকারীদের হত্যা ও হামলার প্রতিবাদে আজ রোববার হরতাল পালন করছে সংগঠনটি। হরতালে দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকারদলীয় সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন স্থানে বাড়ি ও সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আজসহ তিন দিন কতিপয় উশৃঙ্খল ব্যক্তি, গোষ্ঠী ধর্মীয় উন্মাদনায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলায় সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে চলছে। যার মধ্যে উপজেলা পরিষদ, থানা ভবন, সরকারি ভূমি অফিস, পুলিশ ফাঁড়ি, রেলস্টেশন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বাড়িঘর, প্রেস ক্লাসবসহ মানবসম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করে যাচ্ছেন। এ জাতীয় ক্ষয়ক্ষতি সব প্রকার উশৃঙ্খলতা বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় জনগণের জানমাল, সম্পদ রক্ষার্থে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে।’

শুধু কি হেফাজতই বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালাচ্ছে, নাকি এর পেছনে অন্য কেউ আছে— জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন এটা থাকতে পারে। আমার কাছে মনে হচ্ছে তাদের রণ কৌশলগুলো...বাঁশের কেল্লা ইনভলব (যুক্ত) হওয়া, এখানে মনে হচ্ছে, এটা স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়, এগুলো হয়তো আগে যে জঙ্গি সংগঠনগুলো সন্ত্রাস নৈরাজ্য সৃষ্টি করার জন্য প্রয়াস পেয়েছিল, তারাই এখানে আবার নতুনভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে আমাদের মনে হচ্ছে। সবকিছু আমরা খতিয়ে দেখছি। যে যেখানে থাকুক আমরা কাউকে ছাড় দেব না।’

জঙ্গি সংগঠন বলতে কাদের বোঝাচ্ছেন— এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এর আগেও আপনারা দেখেছেন, কিছু জঙ্গি সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে মদদদাতা রয়েছে। জামায়াত-শিবিরের কিছু অদৃশ্য...যখন আমরা সুতা ধরে টান দিই, এসব জঙ্গি সংগঠনের নেতারা আগে জামায়াত-শিবিরের নেতা ছিলেন বলে আমরা দেখেছি। হরকাতুল জিহাদ বলুন, আনসার উল্লাহ বাংলা টিম বলুন, যেটাই বলুন, সবগুলো মূল নেতৃত্ব এসেছে জামায়াত-শিবির থেকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে, কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল এতিম, ছোট ছোট শিশুদের রাস্তায় এনে বসিয়ে দিচ্ছেন। কোনো কোনো জায়গায় স্বার্থ হাসিলের জন্য এই ছোট ছোট এতিমখানার নিরপরাধ ছাত্রদের সামনে দিচ্ছেন। তারাই ভিকটিম হচ্ছে।’

‘তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি করছেন, ভুয়া নিউজ দিয়ে একদম যেসব ঘটনা ঘটেনি, ঢাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি বরং তাদের পরিকল্পনামাফিক কিছু ঘটনা ঘটিয়েছিল। সেই ঘটনাগুলো কেন্দ্র করে নানান ধরনের গুজব সৃষ্টি করেছিল, সেই ভিডিও আমরা দেখেছি। বাঁশের কেল্লা নামক একটি পেজে ভিডিওবার্তার মাধ্যমে তারা অবারিতভাবে এ ধরনের আহ্বান জানিয়েছেন, উত্তেজনা ছড়িয়েছেন।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এগুলোকে মনে করি নাশকতা, এগুলো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। আপনাদের মাধ্যমে জানাচ্ছি, এগুলো থেকে বিরত থাকার জন্য, নতুন আইন অনুযায়ী আমাদের ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি, অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের যাতে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী চরম ধৈর্যের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। এ কাজ যদি বন্ধ না করে তাহলে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য, সুন্দরভাবে দেশ চলছে, সেটাকে ব্যাহত করার জন্য তাদের এই প্রচেষ্টা।’

ফেসবুকসহ কিছু অ্যাপের গতি কমিয়ে রাখা হয়েছে, কত দিন এটা থাকবে— এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘অ্যাপের গতি কমিয়েছে কি না আমি এটা সঠিক জানি না। তবে এটা কোনো যান্ত্রিক অসুবিধা হতে পারে, এটা বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) বলতে পারবে।’

আইনশৃঙ্খলা নিয়ে মিটিংয়ে কী আলোচনা হয়েছে— জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আপনাদের যা জানালাম তাই আলোচনা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সবসময়ই একটা...এরা দুই দলে মারপিট করে, দুই গ্রাম, দুই দল সবসময়ই মারপিট করে। আজকে কেন যে এরা নিরীহ মানুষের বাড়িঘর পোড়াচ্ছেন। সরকারি সম্পদ নষ্ট করছেন। আমরা এর পেছনে যে কারণ অনুমান করছি, আগে জঙ্গিরা নাশকতা করার জন্য যে রকমের প্রচেষ্টা নিয়েছিল, সেই রকমের হতে পারে। জামায়াত-শিবির হতে পারে, বিএনপির লোকজন মদদ দিতে পারে।’

হরতাল তো হেফাজত ডেকেছে— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, হেফাজত ডেকেছে। এখন হেফাজতের ভেতরে যেগুলো দেখছি, অনেক উসকানি চলে আসছে। বিভিন্ন মহল থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে...সেগুলো যদি খোঁজা যায়, তাহলে দেখা যাবে তারা অন্য দলের অন্য মতাদর্শের লোকজন।’

এসবের জন্য আপনারা হেফাজতকে দায়ী করছেন না— জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবাইকেই দায়ী করছি, সবকিছু গুছিয়ে সাক্ষী-প্রমাণ নিয়ে এগুলোর ব্যবস্থা আমরা নেব।’

সরকারের নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে কি এরা উৎসাহিত হচ্ছে— জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার কখনও নমনীয় নয়, সরকার সবসময় ধৈর্যের পরিচয় দেয়। এই ধৈর্যটা নেয়া হচ্ছে, আপনারা দেখেছেন ইতোমধ্যে কতগুলো নিরীহ মাদরাসাছাত্র, মাদরাসায় যারা অধ্যয়ন করে এর ৭০ ভাগই একটু নিম্ন আয়ের মানুষ। এদের ঢাল হিসেবে নিয়ে ব্যবহার করা, আমি মনে করি এটা তারা খুবই অন্যায় কাজ করছেন। ধর্মের নামে তাদের ভুল বুঝিয়ে তারা করে যাচ্ছে। এগুলো থেকে বিরত থাকার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।’

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকা‌বিলায় র‌্যাব প্রস্তুত
নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়
জানুয়ারি থেকে ১০ ডলার করে রেশন পবে রোহিঙ্গারা
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল গঠন ইসির
ইনানী–সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু
খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দেশের ২১ শতাংশ মানুষ
ভোটের দিন ঘিরে নাশকতার তথ্য নেই
নির্বাচন ঘিরে সেন্টমার্টিনের পর্যটন বন্ধ ৩ দিন
মেট্রোরেলে মাছ-মাংস-সবজি পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা
জলবায়ু পরিবর্তনে দেশে বেড়েছে বজ্রপাত-মৃত্যু