জার্মানির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদসংস্থা ডিডব্লিউর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জার্মানির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড-এর অর্থায়নে পরিচালিত এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পোশাক প্রস্তুতকারকদের সংস্থা ‘স্টার নেটওয়ার্ক' ও ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগ এটি। বাংলাদেশ, চীন, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, তুরস্ক, মরক্কো ও ইন্দোনেশিয়ার ১৩টি পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এই উদ্যোগের সঙ্গে রয়েছে।
ডিডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নীতিমালার একটি খসড়া অনুলিপি ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। চলতি মাসের শেষ নাগাদ সেটি চুড়ান্ত করে প্রকাশ করা হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স চুক্তি বা নীতিমালার খসড়াটি দেখেছে। যে বিষয়গুলো সেখানে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে পোশাক তৈরি ও বিক্রির আলোচনায় কিছু ন্যূনতম শর্ত মেনে চলা, সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে পেমেন্ট পাওয়ার দাবি করা, অর্ডার চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরে ডিসকাউন্টের সুযোগ দেয়ার রীতি বন্ধ করা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করতে বাংলাদেশসহ ৯ দেশের একাধিক গার্মেন্টমালিকের সঙ্গে কথা বলেছে ডিডব্লিউ। তারা জানিয়েছেন, করোনার কারণে গত এক বছরে এমনিতেই উন্নত বিশ্বে পোষাক বিক্রি কমে গেছে। এখনও অনেক দেশে লকডাউনসহ কড়াকড়ি থাকায় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পোশাক প্রস্তুতকারকেরা অর্ডার কম পাচ্ছেন।
গার্মেন্টমালিকদের অভিযোগ— এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে তাদের বায়ার (ক্রেতা) পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো। মহামারির জন্য বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো পোশাক কারখানার মালিকদের সঙ্গে নানান দেনদরবারে যাচ্ছেন। কেউ অর্ডার কমানোর দাবি জানাচ্ছেন, আবার কেউ দেরি করে পেমেন্ট করতে চাইছেন। এসব দাবি না মানলে ব্র্যান্ডগুলো অন্য দেশের অন্য কোনো কোম্পানির কাছে চলে যাবারও হুমকি দিচ্ছেন। ফলে ব্যবসা হারানোর আশঙ্কায় দাবি মানতে বাধ্য হচ্ছেন পোশাক কারখানার মালিকরা।
ঢাকার এক পোশাক প্রস্তুতকারক রয়টার্সকে জানান, ‘ক্রেতারা অর্ডার কমানোর কথা বলছে, পেমেন্ট দিতে দেরি করতে চাইছে... আমি যদি এতে রাজি না হই, তারা অন্যের কাছে চলে যাবে।’
স্টার নেটওয়ার্কের মুখপাত্র মিরন আলী বলছেন, ‘আমরা এতদিন ক্রেতাদের অন্ধভাবে বিশ্বাস করতাম।যদি তারা বলতো, আমাদের কাছ থেকে তারা এক লাখ গজ কাপড় কিনতে চায়, কিন্তু আনুষ্ঠানিক অর্ডারটা তিন সপ্তাহ পর দিতে চায়, তাহলেই আমরা কাজ শুরু করে দিতাম; কিন্তু বর্তমানে সেই বিশ্বাসটা হারিয়ে গেছে।’
ডিডব্লিউকে তিনি জানান, এই উদ্যোগের বিষয়ে ইতোমধ্যে বায়ারদের জানানো হয়েছে। এই নীতিমালা বা চুক্তির পরবর্তী ধাপে ক্রেতাদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগ সমাধানের জন্য একটি আন্তর্জাতিক সালিস-নিষ্পত্তি ব্যবস্থা গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে।