এ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, ব্র্যাক ব্যাংক তার গ্রাহক এবং স্টেকহোল্ডারদের মাঝে যে সুনাম নিয়ে বছর শুরু করেছিল, মহামারি চলাকালীন অনবদ্য পারফরম্যান্সের কারণে বছর শেষে তা অনেক গুণ বেড়েছে। অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতেও পেশাদারিত্ব এবং আন্তরিকতার সঙ্গে কাজে সর্বোচ্চ মান প্রদর্শন করায় ব্যাংকের ৯ হাজার ৫০০ কর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৯ এপ্রিল ভার্চুয়াল এক বার্ষিক পারফরম্যান্স অনুষ্ঠানে স্থানীয় এবং বিদেশি বিনিয়োগ বিশ্লেষক, পোর্টফোলিও ম্যানেজার এবং মূলধন বাজার বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। যেখানে যুক্ত ছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের ডিএমডি এবং চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার এম মাসুদ রানা, ডিএমডি এবং চিফ অপারেটিং অফিসার সাব্বির হোসেন, ডিএমডি এবং হেড অফ কর্পোরেট ব্যাংকিং তারেক রেফাত উল্লাহ খানসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন বিজনেস প্রধানরা।
মহামারির শুরুর দিকেই নতুন স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ, ভার্চুয়াল অপারেশন প্ল্যাটফর্ম বর্ধিতকরণ এবং ডিজিটাল গ্রাহক সমাধানগুলোকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত করার মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক প্রথম থেকেই তার কাজ সফলভাবে পুনঃসংগঠিত করতে সক্ষম হয়েছিল। এছাড়াও এর ফলে মহামারি চলাকালে গ্রাহকদের অবিচ্ছিন্ন সেবা দেওয়ার পাশাপাশি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে।
২০২০ সাল জুড়ে ব্র্যাক ব্যাংক-এর উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন
এককভিত্তিতে ৪৫৪ কোটি টাকা ও সমন্বিতভিত্তিতে (সব সহযোগী সংস্থাসহ) ২০২০ সালে ৪০৩ কোটি টাকার কর-পরবর্তী নেট মুনাফা (এনপিএটি) নিবন্ধন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে একক ভিত্তিতে ৩ দশমিক ৪২ টাকায় ও সমন্বিত ভিত্তিতে ৩ দশমিক ৩৩ টাকায়।
ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ আগামী ২৭ মে ২০২১-এ অনুষ্ঠিতব্য ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ এবং ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশের প্রস্তাব দিয়েছে। বছরপ্রতি গ্রাহক আমানত প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ এবং আমানত মিশ্রণ ৪৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৫ শতাংশ হয়েছে।
গ্রাহক ঋণ পোর্টফোলিওর ব্যাপারে ২০২০ সালে বেশ সতর্ক ছিল ব্র্যাক ব্যাংক। এক্ষেত্রে বছর প্রতি প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ। গ্রাহকদের ঋণ প্রদানের ব্যাপারে শক্তিশালী সূচনার পরও মহামারি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) সেক্টরে বছর প্রতি ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ হলেও করপোরেট, বাণিজ্যিক এবং রিটেইল ব্যাংকিংয়ে ঋণ প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে খুব সংবেদনশীল ছিল।
এপ্রিল ২০২০ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঋণ ও বিনিয়োগের সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনায় ২০২০ সালে গ্রাহক ঋণ থেকে নেট সুদের আয় সমগ্র ব্যাংকিং খাতেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হ্রাস পেয়েছিল। তারপরও ব্র্যাক ব্যাংক ৪ দশমিক ৬ শতাংশ নেট সুদের মার্জিনের মাধ্যমে বছরের শেষ করেছে।
গ্রাহক ঋণ প্রদানে সতর্কতা ও ঋণ দেওয়ায় হারের হ্রাসকৃত সীমায়নের ফলে কমে যাওয়া সুদের আয় পুনরুদ্ধারে ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগ শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে। সরকারি সিকিউরিটিগুলির বিনিয়োগ থেকে বছর প্রতি আয় প্রবৃদ্ধি ছিল ৫৩ শতাংশ।
কোভিড-১৯ সম্পর্কিত স্বাস্থ্য-সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং মহামারি চলাকালীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নির্দেশিত কর্মীদের জন্য নির্ধারিত ভাতা বাবদ ২৪ কোটি টাকা ব্যয় হলেও ব্র্যাক ব্যাংক তার অপারেটিং ব্যয়ের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম হয়েছে। ব্যাংকের একক খরচ-উপার্জনের অনুপাত (সিআইআর) ২০২০ সালে ছিল ৫৮ শতাংশ, একীভূত সংস্থাগুলির সিআইআর অনুপাত ছিল ৭১ শতাংশ।
২০২০ সালে ব্যাংকের নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) অনুপাত হ্রাস পেয়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা নিয়ন্ত্রক সংস্থার সহিষ্ণু নীতির প্রতিফলন। মহামারি থেকে উদ্ভূত সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ব্যাংকের এনপিএল কভারেজ অনুপাত ১৭১ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছিল। বাংলাদেশের ব্যাংকিং শিল্পে এটি অন্যতম উচ্চ এনপিএল কভারেজ অনুপাত। ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সমন্বিত ভিত্তিতে ব্যাংকের শেয়ার প্রতি নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ছিল ৩৬ দশমিক ৬৩ টাকা, যা এককভিত্তিতে ছিল ৩৫ দশমিক ৪১ টাকা।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অর্থায়নে অগ্রাধিকার দেওয়ার ভিশন (লক্ষ্য) নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে, যা এখন পর্যন্ত দেশের অন্যতম দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী একটি ব্যাংক। ১৮৭টি শাখা, ৩৭৪টি এটিএম বুথ, ৪৫৬টি এসএমই ইউনিট অফিস এবং ৮ হাজারেরও বেশি মানুষের বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক করপোরেট ও রিটেইল সেগমেন্টেও সার্ভিস দিয়ে আসছে। এগার লাখেরও বেশি গ্রাহক নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক বিগত ২০ বছরেই দেশের সবচেয়ে বৃহৎ জামানতবিহীন এসএমই অর্থায়নকারী ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।