মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ নির্দেশ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী অর্থসংবাদকে বলেন, আজকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি চিঠি সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টে আসছে। আমি আজকে ছুটিতে থাকায় চিঠিটি পাইনি। তবে যেহেতু আমাদের রেগুলেটরি বডি থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাই তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আগামীকাল ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভা রয়েছে। তারপর হয়তো বোর্ড মিটিংয়ে এ বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিবে, তারপর বিস্তারিত জানাতে পারবো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই আদেশে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৪৬ ধারার আওতায় মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে এ. কে. এম সাহিদ রেজাকে অপসারণের আদেশ প্রদান করা হলো। ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৪৬ (৩) ধারা মোতাবেক এই আদেশের তারিখ থেকে আগামী দুই বছর পর্যন্ত উক্ত ব্যাংক বা অন্য কোন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংযুক্ত হতে পারবেন না।
ওই লিখিত আদেশে জানানো হয়, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি (মহাব্যবস্থাপক) পি.কে হালদারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে দুর্নীতি, জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণের মধ্যে ৪টি অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে সৃষ্ট ঋণের একটি অংশ ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সহযোগিতায় এ. কে. এম সাহিদ রেজার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করে ঋণ নিয়মাচার ও বিধি-বিধান লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে ঋণের নামে উক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে অর্থ সরানো, পি.কে হালদারের দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে সাহিদ রেজার সম্পৃক্ততা ও এক প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ অনুমোদন করিয়ে তা তার অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৮/৯/২০০৫ তারিখের জারিকৃত Managing Core Risks of Financial Institution- credit Risk Management গাইডলাইনস এর ১.২ এর বর্ণিত নির্দেশনার লঙ্ঘন এবং কোম্পানী ও আমানতকারীদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। এ অবস্থায় স্থায়ী কমিটি ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৬ ধারায় তাকে অপসারণের সুপারিশ করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র মতে, এ.কে.এম. সাহিদ রেজার বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস থেকে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অস্তিত্ববিহীন ৪ প্রতিষ্ঠানের নামে দুর্নীতি , জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণ নিজের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করার অভিযোগ ওঠে।
তার (সাহিদ রেজা) বিরুদ্ধে অর্থ সরানোর মাধ্যমে ঋণ নিয়মাচার এবং বিধি-বিধান লঙ্ঘনজনিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠির ব্যাখ্যা দেন সাহিদ রেজা। তবে তার সেই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
পরবর্তীতে ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৪৮ ধারা অনুযায়ী স্থায়ী কমিটিকে এ বিষয়ে রিপোর্ট দিতে দায়িত্ব দেয়া হয়। স্থায়ী কমিটি চলতি বছরের ৪, ১১ ও ১৩ এপ্রিল তিনদিনের শুনানিতে সাহিদ রেজার বক্তব্য গ্রহণ করে।
স্থায়ী কমিটির নিকট প্রদত্ত বক্তব্য, কারণ দর্শানোর জবাব এবং কাগজপত্র বিস্তারিত পর্যালোচনা করে সাহিদ রেজার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পায়। এর প্রেক্ষিতে তাকে অপসারণের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই আদেশে তিনি সংক্ষুদ্ধ হলে উল্লেখিত আইনের ৪৮ (২) ধারায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নিকট আপিল করতে পারবেন।