শেষ সেশনের খেলায় বাধা দিয়েছে প্রকৃতি। বৃষ্টির কারণে একবার খেলা বন্ধ রাখতে হয়েছে। পরে দ্বিতীয় দফায় শুরু হলেও আকাশ মেঘে ঢেকে থাকায় আলোক স্বল্পতায় আগেভাগেই থামাতে হয়েছে দ্বিতীয় দিনের খেলা। প্রায় ২৪ ওভারের মতো বাকি ছিল দিনের।
এই মেঘ-বৃষ্টির দিনে ষষ্ঠ উইকেটের জুটি কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছে বাংলাদেশকে। রমেশ মেন্ডিস আর নিরোশান ডিকভেলা ১৯.৩ ওভার ব্যাটিংয়ে থেকে অবিচ্ছিন্ন আছেন ৮৭ রানে। ডিকভেলা ৬৪ আর মেন্ডিস ২২ রানে অপরাজিত।
তবে এটুকু বাদ দিলে বোলিংয়ে বেশ স্বস্তির এক দিনই কেটেছে বাংলাদেশের। প্রথম দুই সেশনে লঙ্কানদের ৫ উইকেট তুলে নিতে পেরেছে টাইগাররা। সবমিলিয়ে আজ (শুক্রবার) ১৭৮ রান যোগ করেছে স্বাগতিক দল।
বৃহস্পতিবার সারাদিন বোলিং করে মাত্র ১ উইকেট নিতে পেরেছিল বাংলাদেশ দল। বিপরীতে ৯০ ওভারে শ্রীলঙ্কা তুলে ফেলেছিল ২৯১ রান। তবে আজ ম্যাচের দ্বিতীয় দিন ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। দিনের প্রথম দুই সেশনে তুলে নেয় ৫টি উইকেট।
আগুনে বোলিং করে তাসকিন আহমেদ একাই নিয়েছেন ৩টি উইকেট। এছাড়া দুই স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলামের শিকার ১টি করে উইকেট। ১৪৬ ওভারে ৬ উইকেটে ৪২৫ রান নিয়ে চা-বিরতিতে যায় শ্রীলঙ্কা। বিরতির পর তৃতীয় সেশনে খেলা হয়েছে ১০ ওভারের মতো।
চলতি টেস্টের প্রথমদিন একমাত্র উইকেট পেয়েছিলেন অভিষিক্ত শরিফুল ইসলাম। তবে সবমিলিয়ে বাংলাদেশ দলের সেরা বোলার ছিলেন তাসকিন। কিন্তু উইকেটের দেখা পাননি তিনি। তবে দ্বিতীয় দিন সকালে তার হাত ধরেই প্রথম ব্রেকথ্রু পায় বাংলাদেশ।
আগের দিনের মতো আজও লম্বাসময় ধরে খেলার পণ নিয়েই ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ওশাদা ফার্নান্দো এবং লাহিরু থিরিমান্নে। তবে তাদের সহজে রান তোলার সুযোগ দেননি বাংলাদেশ দলের পেসাররা।
যার ফলস্বরুপ দিনের ১৫তম ওভারে গিয়ে মিলেছে প্রথম সাফল্য। তাসকিন, শরিফুল, আবু জায়েদ রাহিদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে প্রথম ১৪ ওভারে ২২ রানের বেশি করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। দিনের ১৫তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন তাসকিন। প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন সেঞ্চুরিয়ান লাহিরু থিরিমান্নেকে।
তাসকিনের শর্ট লেন্থে করা ডেলিভারিটি ছিল মিডল-লেগ স্ট্যাম্প বরাবর। কিন্তু আগেই অফস্ট্যাম্পের দিকে সরে গিয়েছিলেন থিরিমান্নে। ফলে অনসাইডে খেলার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু ব্যাটে-বলে হয়নি। তার ব্যাটের কানায় লেগে বল জমা পড়ে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসে।
দলীয় ৩১৩ রানের মাথায় আউট হওয়ার আগে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরিতে ১৫ চারের মারে ২৯৮ বলে ১৪০ রানের ইনিংস খেলেন থিরিমান্নে। তার বিদায়ে ভাঙে ওশাদা ফার্নান্দোর সঙ্গে ১০৪ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকা ওশাদা তুলে নেন ফিফটি।
থিরিমান্নে আউট হওয়ার পর একই ওভারের চতুর্থ বলে সাজঘরে ফিরতে পারতেন শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতম ব্যাটসম্যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল চলে যায় লিটনের গ্লাভসে। কিন্তু ফিল্ডারদের কেউই আবেদন করেননি। ফলে বেঁচে যান ম্যাথুজ।
অবশ্য এ জীবনটি কাজে লাগাতে পারেননি লঙ্কানদের অভিজ্ঞতম ব্যাটসম্যান। তাসকিনের করা ১০৯তম ওভারের প্রথম বলে ধরা পড়েন উইকেটের পেছনে। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলটি চেক শট খেলতে গিয়ে ব্যাটের বাইরের কানায় লাগে ম্যাথুজের, ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে উইকেট নিশ্চিত করেন লিটন দাস।
তাসকিনের জোড়া উইকেটের পর প্রয়োজন ছিল অপরপ্রান্ত থেকে যোগ্য সঙ্গ। দুই ওভার পর সেই কাজটিই করে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তার শার্প টার্ন ও বাউন্সি ডেলিভারিতে কুপোকাত হন প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ধনঞ্জয় ডি সিলভা। স্লিপে ক্যাচ ধরে ২ রান করা ধনঞ্জয়কে ফেরান নাজমুল হোসেন শান্ত।
আগেরদিন ১৭ ওভার বোলিং করে ৩ মেইডেনের সঙ্গে ৬৯ রান খরচায় উইকেটশূন্য ছিলেন তাসকিন। আজকের সকালের সেশনে ১০ ওভারে ৪ মেইডেনের সহায়তায় ১৭ রানের বেশি খরচ করেননি তিনি। শিকার করেন দুইটি উইকেট।
আগুনে বোলিংয়ে দিনের প্রথম সেশনটা বাংলাদেশকে জেতান তাসকিন আহমেদ। ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন দ্বিতীয় সেশনেও। বল হাতে নিয়েই ভেঙে দেন বিপদজনক হয়ে উঠতে থাকা পঞ্চম উইকেট জুটি, সাজঘরে ফেরান পাথুম নিসাঙ্কাকে।
দিনের প্রথম সেশনে ২৬ ওভারে ৪৩ রানের বিপরীতে ৩ উইকেট হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। যেখানে তাসকিনের শিকার ছিল ২ উইকেট। তবে দ্বিতীয় সেশনে ১৯ ওভারেও তাসকিনকে ব্যবহার করেননি অধিনায়ক মুমিনুল। ততক্ষণে কোনো উইকেট না হারিয়ে এই সেশনে ৪৪ রান করে ফেলেছিল শ্রীলঙ্কা।
ইনিংসের ১৩৬ ও সেশনের ২০তম ওভারে তাসকিনকে নতুন স্পেলের জন্য ডাকেন মুমিনুল। ওভারের তৃতীয় বলে বাউন্ডারি হজম করেন তাসকিন। তবে পরের বলেই দারুণ এক রিভার্স সুইংয়ে সরাসরি বোল্ড করেন ৮৪ বলে ৩০ রান করা নিসাঙ্কাকে। ফলে ভেঙে যায় ৫৪ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি।
ঠিক পরের ওভারেই উইকেট শিকারের তালিকায় নাম লেখান মেহেদি হাসান মিরাজ। তার অফস্ট্যাম্পের ওপর করা বলে স্কুপ খেলার চেষ্টা করেন সেঞ্চুরির কাছে চলে যাওয়া ওশাদা ফার্নান্দো। কিন্তু ব্যাটে দুইবার লেগে বল হাওয়ায় ভেসে যায়। উইকেটের পেছনে চতুরতার সঙ্গে বলটি লুফে নেন লিটন। আউট হওয়ার আগে ৮১ রান করেন ওশাদা।
তবে এরপর আবার প্রতিরোধ গড়েছেন নিরোশান ডিকভেলা ও রমেশ মেন্ডিস। এই জুটিটা ভাঙাই তৃতীয় দিনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বাংলাদেশের বোলারদের জন্য।