ভারত সরকার এই সিদ্ধান্তে অটল থাকলে আগামী জুলাই মাসের আগে ভারতে থেকে কোভিশিল্ড (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিতদ করোনার টিকা) পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই শূন্য বাংলাদেশের জন্য। সেক্ষেত্রে কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ গ্রহণকারী অনেকেই সময়মতো দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন না।
ভারতে কোভিশিল্ড উৎপাদনকারী কোম্পানি সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে ৩ কোটি টিকা আমদানির জন্য চুক্তি করেছে বাংলাদেশের কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। তারা দেড়কোটি টিকার আগাম মূল্যও পরিশোধ করে রেখেছে। চুক্তি অনুসারে, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশের পাওয়ার কথা। কিন্তু চুক্তি সত্ত্বেও ফেব্রুয়ারির পর থেকে টিকা রপ্তানি বন্ধ রেখেছে ভারত। দেশটির এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ। কারণ ভারতকে বিশ্বাস করে টিকার জন্য এতদিন অন্য কোনো দেশের সাথে চুক্তি করেনি সরকার। গত সপ্তাহে ভারতের কাছ থেকে অনেকটা নেতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যমে রাশিয়া ও চীনের টিকা অনুমোদন করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এর মধ্যে রাশিয়া বাংলাদেশে সরাসরি টিকা (স্পুতনিক ভি) রপ্তানির পাশাপাশি এখানে উৎপাদনের জন্য শর্তসাপেক্ষে অনুমতিও দেবে।
দ্যি হিন্দুর খবরে বলা হয়েছে, ভারত ইতোমধ্যেই বাণিজ্যিক এবং বরাদ্দ-ভিত্তিক টিকা রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। যেসব প্রতিবেশি দেশ ইতোমধ্যেই দাম পরিশোধ করেছে সেগুলো পাঠানোও বন্ধ রাখা হয়েছে। এপ্রিলের শুরুতে ভারতে করোনা মহামারির প্রাণঘাতী দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর এই সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি।
করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। আগামী ১ মে থেকে সব প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে দেশটি। দেশের চাহিদা মেটাতে এপ্রিলের শুরুতে সর্বশেষ ভ্যাকসিনের চালান রফতানি করে ভারত। এরপরই আগে দাম পরিশোধ করা থাকলেও রফতানি বন্ধ রেখেছে দিল্লি।
আবারও কবে নাগাদ রফতানি শুরু হবে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ শ্রিংলা কোনও সময়সীমা জানাতে পারেননি। ভ্যাকসিন রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণে প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের কোনও অবনতি হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রিংলা বলেন, বর্তমানে আমাদের প্রয়োজন অনেক বেশি, আর আমাদের সব সহযোগীরাই বুঝতে পারছে এই পরিস্থিতিতে আমাদের প্রয়োজন হলো টিকাদান কর্মসূচি বাড়ানো, দুই-তিনশ’ কোটি, সেকারণে আমাদের টিকাদান তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বাড়াতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রয়োজন অনেক বেশি আর আমরা যা উৎপাদন করছি তা আমাদের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন মেটানোর জন্য দরকার পড়বে।’
উল্লেখ, কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ নেওয়ার দুই মাসের মাথায় দ্বিতীয় ডোজ নিলে সেটি দেহে এন্টিবডি তৈরিতে অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে এই সময়সীমা মেনেই টিকা প্রদানের কাজ চালানো হচ্ছে।