সম্প্রতি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য জাপান সরকার-২০২২ সালের জন্য আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, মাস্টার্স এবং পিএইচডি কোর্সে মনবুকাগাকুশো বৃত্তি ঘোষণা করেছে। এটি মনবুশো, মেক্সট নামেও পরিচিত। এ বৃত্তি সাধারণত দুইভাবে পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে বাংলাদেশে অবস্থিত জাপান দূতাবাসের মাধ্যমে। আরেকটি হচ্ছে, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাচ্ছেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে। জাপানে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মাধ্যম হচ্ছে জাপানি। তবে ইংরেজিতেও বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে।
জাপান সরকার বরাবরই শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তারই অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্য শিক্ষাপ্রতিস্থানগুলোতে অধ্যয়ন করতে আগ্রহী বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি শিক্ষাবর্ষে স্কলারশিপের আয়োজন করে থাকে।
মোট তিনটি ক্যাটাগরিতে এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। সেগুলো হচ্ছে-
১. স্নাতক (আন্ডারগ্র্যাজুয়েট) স্তরে সাধারণ শাখার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে এই বৃত্তি পাওয়া যাবে। বিষয়গুলো হলো-
ক. সোশ্যাল সায়েন্স এবং হিউম্যানিটিজ। এর দুটি ভাগ রয়েছে: এ আর বি। এ-র মধ্যে রয়েছে ল’, পলিটিক্স, সোশ্যায়োলোজি, লিটারেচার, হিস্ট্রি ও জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজ। বি-তে রয়েছে ইকোনমিক্স আর বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
খ. ন্যাচারাল সায়েন্সের তিনটি ভাগ রয়েছে। এ, বি এবং সি। এ-তে সায়েন্স (ম্যাথমেটিক্স, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি), ইলেকট্রিক এবং ইলেকট্রনিক স্টাডিজ, মেকানিক্যাল স্টাডিজ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেরিটাইম ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, কেমিক্যাল স্টাডিজ ও বায়োটেকনোলজি। বি-তে রয়েছে এগ্রিকালচারাল স্টাডিজ, হাইজিনিক স্টাডিজ নার্সিং এবং বায়োলজি। সি-এর মধ্যে রয়েছে মেডিসিন ও ডেন্টিস্ট্রি। এমনিতে এই কোর্সগুলো চার বছরের হলেও মেডিক্যাল ডিগ্রি কোর্সের মেয়াদ ছয় বছরের। উল্লেখ্য, সর্বোচ্চ ৩টি সাবজেক্টের নাম প্রেফারেন্স হিসেবে দেওয়া যাবে। সব সাবজেক্ট একটি ভাগের হতে হবে। শুধু যারা ফার্স্ট প্রেফারেন্স ভাগ “সি” থেকে দেবেন, তারা অন্য ভাগ থেকে পরের প্রেফারেন্স দিতে পারবেন।
২. কলেজ অব টেকনোলজিতে পড়ার ক্ষেত্রে পাঠ্য বিষয়গুলো হলো মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন, কমিউনিকেশন অ্যান্ড নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার অ্যান্ড সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেরিটাইম ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি। অধিকাংশ কোর্সের মেয়াদ তিন বছরের। তবে মেরিটাইম ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে সময় লাগে সাড়ে চার বছর।
৩. যারা স্পেশালাইজড ট্রেনিং কলেজে পড়ালেখা করতে ইচ্ছুক, তারা পড়তে পারেন টেকনোলজি, পার্সোনাল কেয়ার এবং নিউট্রিশন, এডুকেশন এবং ওয়েলফেয়ার, বিজনেস, ফ্যাশন এবং হোম ইকোনমিক্স, কালচার এবং জেনারেল এডুকেশনের মতো নানা বিষয়ে। সাধারণত এই সব কোর্সগুলোর মেয়াদ দু’বছর হয়ে থাকে।
সুযোগ-সুবিধা
শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির আওতায় জীবনযাত্রার খরচের জন্য প্রতি মাসে ১,৪৩,০০০– ১,৪৫,০০০ ইয়েন পাবেন। টিউশনের জন্য পূর্ণ খরচ প্রাপ্তি এবং এন্ট্রান্স পরীক্ষার ব্যয়ের সম্পূর্ণ কভারেজ পাবেন। তাছাড়া জাপান যেতে এবং পড়ালেখা শেষে বাড়ি ফিরতে বিমান খরচ পাবেন।
আবেদনের যোগ্যতা
স্কলারশিপের জন্য কিছু যোগ্যতার মানদণ্ড দেওয়া হয়েছে। চলুন দেখে নেই আবেদন করতে কী কী যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন।
১. বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে।
২. মাস্টার্স এবং পিএইচডি কোর্সের ক্ষেত্রে ২ এপ্রিল ১৯৮৫ এবং আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্সের ক্ষেত্রে ২ এপ্রিল ১৯৯৫ এর পরে জন্মগ্রহণকারীরা আবেদন করতে পারবে।
৩. সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে।
৪. মিলিটারি পারসোনেল আবেদন করতে পারবেন না।
কীভাবে আবেদন করবেন?
আবেদন করার জন্য - http://scholar.banbeis.gov.bd/MEXT/
উপরোক্ত লিঙ্কে গিয়ে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী ফরমটি পূরণ করতে হবে। এরপর এই আবেদনের প্রিন্ট কপি, পাসপোর্টের ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, IELTS/TOEFLসার্টিফিকেট কপি, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের সত্যায়িত ফটোকপি খামে ভরে বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। খামের উপর অবশ্যই প্রেরক, প্রাপক, আইডি/ট্র্যাকিং নম্বর, প্রোগ্রামের নাম বাংলায় লিখতে হবে।
অনলাইন লিঙ্কটি ৫ মে ২০২১- ২০ মে ২০২১ বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। হার্ডকপি আবেদনপত্র দাখিলের সময়সীমা ১৬ মে ২০২১ থেকে ২০ মে ২০২১, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
বাছাই প্রক্রিয়া
জাপান দূতাবাসের প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ের পর প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণ করতে হবে। জাপান এবং ইংরেজি ভাষার উপর লিখিত পরীক্ষাটি হবে। নির্বাচিত প্রার্থীদের সেকেন্ড স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে সিলেক্ট করা হবে। আন্ডারগ্র্যাজুয়েটের জন্য যারা সামাজিক বিজ্ঞান এবং মানবিক বিষয় পছন্দ করবে, তাদের অতিরিক্ত গণিত আর যারা বিজ্ঞান বিষয় পছন্দ করবে তারা অতিরিক্ত গণিত এবং বিজ্ঞানের ২টি (পদার্থ, রসায়ন জীববিজ্ঞান) বিষয় মোট ৫টি বিষয়ের উপর লিখিত পরীক্ষা দেবে। বিজ্ঞানের ২টি বিষয়ের মধ্যে রসায়ন অবশ্যই দিতে হবে।
পদার্থ আর জীববিজ্ঞানের মধ্যে যেই বিষয়ের পরীক্ষা দেওয়া হবে, সেই সম্পর্কিত বিষয়ের জন্যই প্রার্থী বিবেচিত হবে। ক্যালকুলেটর ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের নাম জুলাই, ২০২১ তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।