এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেন, এ নিয়ে পর্ষদ নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আরও অনেক প্রক্রিয়ার পর বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
এদিকে করোনাভাইরাসে শ্রীলঙ্কার পর্যটন খাত নাজুক হয়ে গেছে। ২০১৯ সালে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এই খাতের অবদান ছিল ১২ দশমিক ৬ শতাংশ, যা এখন অনেক কমেছে। ফলে বৈদেশিক বিনিময়ে প্রতিনিয়ত মান হারাচ্ছে দেশটির মুদ্রা রুপি। এতে টান পড়েছে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতে। এমন পরিস্থিতিতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ডলার ধার করছে শ্রীলঙ্কা। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারও সহযোগিতার এই আশ্বাস দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ধার হিসেবে নয়, ডলারের সঙ্গে শ্রীলঙ্কান রুপি অদল-বদল বা সোয়াপ করেই তা দেওয়া হবে। এর বিপরীতে কিছু সুদও পাবে বাংলাদেশ। গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ রিজার্ভ থেকে এই ডলার দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।
মুজিব চিরন্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে গত ১৯ মার্চ ঢাকায় আসেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। সেই বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ডব্লিউ ডি লক্ষ্মণ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে ডলার চেয়ে সম্প্রতি চিঠি দেন।
এরপর গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। এতে জানানো হয়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪৫ বিলিয়ন ছুঁই ছুঁই। গতকাল যা ছিল ৪ হাজার ৪৮০ কোটি ডলার। এই রিজার্ভ থেকে ২০ কোটি ডলার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পর্ষদে জানানো হয়, শ্রীলঙ্কা তাদের ২০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রুপি বাংলাদেশকে দেবে। ফলে রিজার্ভের পরিমাণে কোনো প্রভাব পড়বে না। এর বিপরীতে দেড় থেকে ২ শতাংশ সুদ পাবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি গত ৭৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় মন্দায় পড়েছে বলে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। চীন থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়ার পর দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ৪৪৭ কোটি ডলার।
শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি গত ৭৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় মন্দায় পড়েছে বলে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। চীন থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়ার পর দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ৪৪৭ কোটি ডলার। পাশাপাশি ভারত থেকেও ডলার চেয়েছে তারা। ২০১৮ সালের ২৪ মে এক মার্কিন ডলারের দাম ছিল শ্রীলঙ্কার ১৫৭ রুপি। ২০১৯ সালের একই সময়ে যা বেড়ে হয় ১৭৬ রুপি। আর গত সোমবার প্রতি ডলারে দাম আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১৯৭ রুপি।
এছাড়া বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নে (ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ) চাহিদার তুলনায় ঘাটতিতে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। দেশটির জিডিপির প্রায় ৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ৪০০ কোটি ডলারের ঘরে, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। যেখানে বাংলাদেশে এ সঞ্চয়ন জিডিপির প্রায় ১২ শতাংশ।