বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে ডা. ফাউসি বলেন, ‘(উহানের গবেষণাগারে) ২০১৯ সালে যারা অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের অন্তত তিনজনের মেডিকেল রিপোর্ট দেখতে চাই আমি। কারণ, এটা জানা প্রয়োজন যে সত্যিই তারা অসুস্থ হয়েছিলেন কি না; আর যদি অসুস্থ হয়েই থাকেন তাহলে ঠিক কী কারণে হয়েছিলেন।’
গত বছর বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ করে আসছিল— এই ভাইরাস চীনে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং গবেষকদের অসাবধানতার কারণে এটি লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক ধাপ এগিয়ে এই করোনাভাইরাসের নাম দিয়েছিলেন ‘চীনা ভাইরাস’। তবে চীন বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। চীনের গবেষক ও বিজ্ঞানীমহলের বরাত দিয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়ে আসছে, প্রাকৃতিকভাবেই এই ভাইরাসটির উদ্ভব হয়েছে।
এমনকি চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এও দাবি করা হয়েছে যে এই ভাইরাসটির জন্মস্থান চীন নয়, প্রতিবেশী কোনো দেশ থেকে ভাইরাসটি চীনে প্রবেশ করেছে।
সম্প্রতি এই ভাইরাসের উৎস তদন্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন দেশের গোয়েন্দাদের নির্দেশ দেন, তখন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণলয় থেকে মন্তব্য করা হয়, মহামারিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও করোনা প্রতিরোধে জাতীয় টাস্কফোর্সের সদস্য ডা. অ্যান্টনি ফাউসি যদিও প্রথমদিকে বিশ্বাস করতেন প্রাকৃতিকভাবেই এই ভাইরাসটির আগমন হয়েছে, কিন্তু সম্প্রতি তিনিও করোনাভাইরাসের উৎস সম্পর্কে সংশয়ে ভুগছেন।
এর মধ্যে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় দৈনিক দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে বলা হয়, ২০১৯ সালের নভেম্বরে চীনের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির ৯জন গবেষণাকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন; এবং তাদের অন্তত তিনজন হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নিয়েছিলেন। করোনা প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে চীনের তথ্য প্রকাশের আগেই এই ঘটনা ঘটেছিল। এতদিন এই তথ্য চীন গোপন রেখেছিল বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরই আবারও দেশটিতে জমে ওঠে এই ভাইরাসটির উৎস সম্পর্কিত বিতর্ক। তার জেরেই ওই তিন গবেষকের মেডিকেল রিপোর্ট দেখতে চেয়েছেন ডা. ফাউসি।
তার এই আহ্বানে চীন সাড়া দেবে কি না জানতে চেয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বার্তাসংস্থা রয়টার্স। তবে তিনি তাৎক্ষনিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিন।
পরে শুক্রবার মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকরা এ ব্যাপরে তাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এই প্রতিবেদন পুরোপুরি অসত্য। ল্যাব থেকে করোনা ছড়ানোর ভুয়া তত্ত্ব এখনো প্রচার করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি আরও বলেন, গত ২৩ মার্চ এক বিবৃতিতে উহানের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি বিভাগ জানিয়েছে যে ওই গবেষণাগারে কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি।
সূত্র: রয়টার্স