সোমবার (১৪ জুন) প্রাণ এগ্রো কর্তৃক দেশে প্রথম আন্তর্জাতিক গ্যারান্টেড বন্ড ইস্যু অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারসন ডিকসন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ-এর পরিচালক (ফাইন্যান্স) উজমা চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রাণ-আরএফএল-এর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের অন্যতম কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কোম্পানি প্রাণ এগ্রো লিমিটেড ২১০ কোটি টাকার (২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ) অরূপান্তরযোগ্য ও রিডেমবল বন্ডের লেনদেন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এটির শতভাগ ক্রেডিট গ্যারান্টি হিসেবে রয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গ্যারান্টকো। গত ১৯ মে বন্ডে পুরো বিনিয়োগ করেছে মেটলাইফ বাংলাদেশ।
প্রাণ-এর এটিই এ ধরনের প্রথম ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্স স্ট্রাকচারড বন্ড। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গ্যারান্টেড প্রথম বাংলাদেশি বন্ড, যা প্রাইভেট প্লেসমেন্টের আওতায় প্রথম ডিজিটাইড বন্ড।
অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান বলেন, মূলত দুটি কারণে এই প্রথম বাংলা বন্ড বেশি আনন্দের। এর মধ্যে একটি হচ্ছে- কৃষি খাতের কোনো কোম্পানি এত বড় সফলতা পেয়েছে। আরেকটি হলো- ভিন্ন বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত চালু হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের ৫০ বছর পূর্তিতে আমাদের ঝুড়িতে আরেকটি সফলতা যুক্ত হলো। এভাবেই দেশকে পরবর্তী গন্তব্যে এগিয়ে নিয়ে যাব। সে ক্ষেত্রে প্রাণ-এর মতো বড় বড় করপোরেট কোম্পানিগুলো সহায়তা করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারসন ডিকসন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের বিনিয়োগে বড় সুসম্পর্ক রয়েছে। এ বন্ড চালু হলে আমাদের বিনিয়োগকারীদের আরও আগ্রহী করে তুলবে। পাশাপাশি বৈশ্বিক বিনিয়োগেও বাংলাদেশের অবস্থান একধাপ এগিয়ে যাবে।
বিডার চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন মধ্যম আয়ের দিকে যাচ্ছি, তখন প্রাণ-এর এমন উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে। এখন দেশি বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ড মার্কেটে উৎসাহিত হবে। এ বাজার বড় হবে।
তিনি বলেন, বিডা বেসরকারি খাতের এমন উদ্যোগের সব সহায়তা দিতে প্রস্তুত। বিনিয়োগের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব সহায়তা আমরা করব।
বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, আজ আমরা এক মাইলফলক অতিক্রম করছি। শুরু থেকে প্রাণ মানুষের খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করছে। তাদের বড় বিনিয়োগ এ পর্যন্ত কৃষিকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে। তারা প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান করেছে, এর মধ্যে অর্ধেক নারী, যা সত্যিই প্রশংসার।
তিনি বলেন, দেশে বন্ডের ভবিষ্যৎ অনেক বিস্তৃত হবে। এর মধ্যে ইসলামিসহ বিভিন্ন বন্ড আসছে। বাংলাদেশের ইকোনমিতে এসব নতুন উদ্যোগ ভালো অবস্থান তৈরি করবে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ-এর সিইও আহসান খান চৌধুরী বাংলা বন্ডের সফলতার অংশীদার হিসেবে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সরকারের আন্তরিক সহায়তায় এ বন্ড চালু করা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি ক্রেডিট গ্যারান্টি হিসেবে বড় সাহায্য রয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গ্যারান্টকোর। বিনিয়োগে সহায়তা করেছে মেটলাইফ বাংলাদেশ, সবাই এ সফলতার অংশীদার।
তিনি বলেন, দেশের বেসরকারি খাতকে সহায়তা দিতে সরকার অনেকটাই আন্তরিক। এজন্য বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, বর্তমানে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ-এ এক লাখ তালিকাভুক্ত চুক্তিভিত্তিক কৃষক রয়েছেন এবং এ গ্রুপ-এর অধীনে কাজ করছেন ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ। বন্ডের অর্থ কৃষির সাপ্লাই চেইন এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণে ব্যবহার করা হবে।
এ বন্ডের একমাত্র বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি মেটলাইফ বাংলাদেশ। এই প্রথম বাংলাদেশে কোনো বীমা কোম্পানি করপোরেট বন্ডে শতভাগ বিনিয়োগ করেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে মেটলাইফের বিনিয়োগের ক্ষেত্রসমূহে আরও বৈচিত্র্য আসবে।
এছাড়া বন্ডের জামানতকারী হিসেবে রয়েছে প্রাইভেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের (পিআইডিজি) অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান গ্যারান্টকো, যার অর্থায়নে রয়েছে যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্সের সরকার। গ্যারান্টকোর ফিচ রেটিং ‘এএ’ এবং মুডি রেটিং ‘এ১’। গ্যারান্টকোর কারণে এ বন্ডের রেটিং হয়েছে ‘এ প্লাস’।
এ বন্ডের ট্রাস্টি ও সিকিউরিটি এজেন্ট হিসেবে রয়েছে গ্রিন ডেল্টা কোম্পানি লিমিটেড এবং প্রাণ এগ্রো-এর আর্থিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছে রিভারস্টোন ক্যাপিটাল লিমিটেড।