পুরুষদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি হওয়ার পেছনে সাধারণভাবে দুর্বল শারিরীক পরিস্থিতির সঙ্গে ধূমপান ও মদ্যপানের মতো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অভ্যাসগুলোকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা।
কেন নারীদের চেয়ে পুরুষদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে তা খুঁজে দেখতে ২০ মার্চ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২০টি দেশের সরকারিভাবে প্রকাশিত ডেটা বিশ্লেষণ করেছে সিএনএন।
এক্ষেত্রে বিশ্বস্বাস্থ্যে লিঙ্গ অসমতার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল হেলথ ফিফটি/ফিফটির সহযোগিতা করেছে।
সিএনএন জানিয়েছে, এই দেশগুলোর মধ্যে মাত্র ৬টি দেশ- চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইরান, ইতালি, ও দক্ষিণ কোরিয়া- করোনাভাইরাসে মৃত ও আক্রান্তের লিঙ্গভিত্তিক তথ্য দিয়েছে। আরও ৭টি দেশ শুধু আক্রান্তের লিঙ্গভিত্তিক তথ্য দিতে দিয়েছে। বাকিগুলোর কোনো লিঙ্গভিত্তিক তথ্য নেই এবং প্রাপ্ত সব তথ্যও সামগ্রিক নয়।
ইতালিতে কভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই পুরুষ, আর মৃতদের মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি পুরুষ। দক্ষিণ কোরিয়াতে কভিড-১৯ রোগে মোট মৃত্যুর ৫৪ শতাংশই পুরুষ বলে জানাচ্ছে সিএএন।
আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার না হলে প্রাণঘাতি কভিড-১৯ সহজেই শ্বাসতন্ত্রকে কাবু করে ফেলে। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শুধু জন্মগত নয়, মানুষের জীবনযাপনের ধরনের কারণেও কমবেশি হয় বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।
সেদিক থেকে ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস ও সাধারণভাবে দুর্বল শারীরিক পরিস্থিতির কারণে দুর্বল হয়ে পড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই মহামারীতে মৃত্যুর মিছিল বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজের করোনাভাইরাস বিষয়ক মুখপাত্র ডা. ডেবোরাহ বার্ক্স শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ইতালির মৃত্যুহারে উদ্বিগ্ন হওয়ার মত প্রবণতা দেখা যাচ্ছে; নানা বয়সীদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নারীদের চেয়ে পুরুষদের মৃত্যুহার দ্বিগুণ।
প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সিএনএন দেখেছে, নভেল করোনাভাইরাসে ইতালিতে ১০ জন নারীর মৃত্যুর বিপরীতে ২৪ জন, চীনে ১৮ জন, জার্মানিতে ১৬ জন, ইরান ও ফ্রান্সে ১৪ জন ও দক্ষিণ কোরিয়াতে ১২ জন পুরুষ মারা গেছেন।
মৃত্যুহারের সঙ্গে কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও নারীদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে বেশি। প্রতি ১০ জন নারীর ইতালিতে ১৪ জন, ইরান ও জার্মানিতে ১৩ জন, চীনে ১০ জন পুরুষ আক্রান্ত পাওয়া গেছে।
এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে সিএনএন বলছে, কভিড-১৯ শনাক্ত হলে নারীদের চেয়ে পুরুষদের মৃত্যুর সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, ৭ শতাংশ ধূমপায়ী নারীর বিপরীতে ধূমপায়ী পুরুষ হচ্ছে ৩৬ শতাংশ। অর্থ্যাৎ নারীর চেয়ে পুরুষ ধূমপায়ীর সংখ্যা ৫ গুণেরও বেশি।
সিএনএনের প্রতিবেদন বলছে, চীনে ধূমপায়ী জনসংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ; এখানে ৩১ দশমিক ৬ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী ধূমপানে আসক্ত।
দেশটির ৫০ শতাংশের বেশি পুরুষ ধূমপান করে থাকলেও ৩ শতাংশেরও কম নারীর ধূমপানের অভ্যাস রয়েছে বলে জানাচ্ছে চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র।
ইতালির জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এ বছরের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে ৪৫ লাখ নারী ধূমপান করে থাকে; অন্যদিকে ৭০ লাখ পুরুষের এই আসক্তি রয়েছে।
একজন অধূমপায়ী কভিড-১৯ রোগীর চেয়ে একজন ধূমপায়ী কভিড-১৯ রোগীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি দেখছে এই ইনস্টিটিউট।