বৃষ্টির কারণে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের দুই দিন (প্রথম দিন ও চতুর্থ দিন) একটি বলও গড়ায়নি। মাঝে দুই দিন খেলা হলেও পুরো দিনেরটা শেষ করা যায়নি। ধারণা ছিল, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ফাইনালটি নিষ্প্রাণ ড্র’তেই নিষ্পত্তি হবে। কিন্তু সেটি হয়নি, বৃষ্টির বাধা টপকে ষষ্ঠ দিন, মানে রিজার্ভ ডের শেষ বিকেলে নিষ্পত্তি হয়েছে। যেখানে জয়ের হাসি নিউজিল্যান্ডের, প্রথম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা বলে কথা!
টেস্টে খেলুড়ে ৯ দেশের দুই বছরের লড়াই শেষে পাওয়া গেলো চ্যাম্পিয়ন দল। তাই নামটা যতই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ দেওয়া হোক না কেন, আইসিসির এই প্রতিযোগিতাটিকে ‘টেস্টের বিশ্বকাপ’ বললে এতটুকু ভুল করা হবে না। তাই শিরোপা জয়ী নিউজিল্যান্ড এখন টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।
সাউদাম্পটনের ফাইনালে রিজার্ভ ডের চা বিরতির প্রথম ঘণ্টাতেই ১৭০ রানে অলআউট হয় ভারত। তাতে নিউজিল্যান্ডের জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫৩ ওভারে ১৩৯ রান। টেস্ট ক্রিকেটে শেষ দিনে এই লক্ষ্যটা বেশ কঠিন। তার মধ্যে বৃষ্টিভেজা উইকেট হওয়ায় রান তোলার পাশাপাশি উইকেটে টিকে থাকাও বেশ কঠিন। বিরুদ্ধ কন্ডিশনে কেন উইলিয়ামসন ও রস টেলর সাবলীল ব্যাটিংয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেছেন। দুজন অবিচ্ছিন্ন ৯৬ রানের জুটি গড়েছেন। অধিনায়ক উইলিয়ামসন ৮৯ বলে ৫২ রানে অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন। অন্যপ্রান্তে টেলর ১০০ বলে ৪৭ রানে থাকেন অপরাজিত, যার মধ্যে তার মারা বাউন্ডারিতেই নিশ্চিত হয় কিউইদের জয়।
প্রথম ইনিংসে ৫৪ রান করা ডেভন কনওয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯ রানে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন। তার আগে অবশ্য টম লাথামকে ব্যক্তিগত ৯ রানে ফেরান এই অফ স্পিনার। এরপর ভারতের বোলাদের কেউই সাফল্য পাননি। ১৭ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন অশ্বিন।
বুধবার চা বিরতির প্রথম ঘণ্টাতেই নিউজিল্যান্ডের বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৭০ রানে অলআউট হয় ভারত। এদিন ৩২ রানে এগিয়ে থেকে ২ উইকেটে ৬৪ রানে রিজার্ভ ডেতে খেলা শুরু করে ভারত। কিন্তু লাঞ্চের আগে বৃষ্টিভেজা উইকেটে কাইল জেমিসনের তোপের মুখে পড়ে বিরাট কোহলিরা। দিনের ষষ্ঠ ওভারে কোহলিকে (১৩) ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু আনেন জেমিসন। পরের ওভারে আগের দিনের ব্যাটসম্যান চেতেশ্বর পুজারাকেও (১৫) ফেরান এই পেসার। এরপর লাঞ্চের ঠিক আগে আজিঙ্কা রাহানেকে ১৫ রানে সাজঘরে ফেরান ট্রেন্ট বোল্ট। সব মিলিয়ে প্রথম সেশনে আরও ৩ উইকেট হারিয়ে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১০৯ রান।
যদিও রবীন্দ্র জাদেজাকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় সেশনে সতর্ক ব্যাটিং করছিলেন ঋষভ পান্ত। কিন্তু এই জুটি ৩৩ রানের বেশি করতে পারেনি। এরপর অশ্বিনকে নিয়ে লিড বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেও সফল হননি পান্ত। বোল্ট এক ওভারেই ফেরান দুজনকে। ইনিংসের সর্বোচ্চ ৪১ রান আসে পান্তর ব্যাট থেকে।
কিউই বোলারদের মধ্যে ৪৮ রানে ৪ উইকেট নেন টিম সাউদি। এছাড়া বোল্ট নিয়েছেন ৩ উইকেট। আগের ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া জেমিসন দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছেন ২ উইকেট। ফলে ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে ফাইনালসেরা খেলোয়াড় তিনিই।
এর আগে বিরাট কোহলি (৪৪) ও আজিঙ্কা রাহানের (৪৯) ব্যাটে ভর করে ভারত প্রথম ইনিংসে ২১৭ রান করে। এরপর মোহাম্মদ সামি ও ইশান্ত শর্মার তোপে ২৪৯ রানে থামতে হয়েছে কিউইদের। তাতে অবশ্য ৩২ রানের লিড পায় নিউজিল্যান্ড। কিন্তু ৩২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে বড় সংগ্রহ করতে পারেনি ভারত। যার ফলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ফাইনালে হারের হতাশায় মুখ লুকালো কোহলিরা।