শনিবার (১০ জুলাই) রাশিয়ার বার্তাসংস্থা স্পুটনিকের বরাত দিয়ে করা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।
রাশিয়ার নভোসিবিরস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার বিভাগের প্রধান ও দেশটির সরকারি বিজ্ঞান সংস্থা রাশিয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের (রাস) সদস্য সের্গেই নেতেসোভ এ বিষয়ে স্পুটনিককে বলেন, ‘যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য বিভিন্ন দেশের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে এরআরএনএ ও ভেক্টর শ্রেনীভুক্ত টিকাসমূহ করোনাভাইরাসের পরিবর্তিত ধরন ডেল্টার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। এই ভাইরাসের অন্যান্য পরিবর্তিত ধরনের তুলনায় ডেল্টার ক্ষেত্রে এই সুরক্ষার হার হয়তো কিছুটা কম, কিন্তু তারপরও এমআরএনএ ও ভেক্টর শ্রেণীর টিকাসমূহ যে (ডেল্টার বিরুদ্ধে) কার্যকর তার ইতোমধ্যে প্রমাণিত।’
‘স্পুটনিক ৫ ও এমআরএনএ শ্রেনীভুক্ত করোনা টিকা। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, মূল করোনাভাইরাস ও এর পরিবর্তিত ধরন আলভা, বিটা, গ্যামার বিরুদ্ধে স্পুটনিক-৫ ৯৫ শতাংশ সুরক্ষা দিতে সক্ষম এবং ডেল্টার ক্ষেত্রে এই সুরক্ষার হার ৯০ শতাংশ।’
করোনা টিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে প্রধানত দু’ ধরনের প্রযুক্তি বা পদ্ধতি ব্যবহার করছে টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানসমূহ। একটি পদ্ধতি অনুসারে টিকার মূল উপাদান হিসেবে এমন একটি রাসায়নিক মিশ্রন ব্যবহার করা হয়, যা মানবদেহে প্রবেশের পর দেহের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বা অ্যান্টিবডিকে বিশেষভাবে শক্তিশালী ও প্রশিক্ষিত করে তোলে, ফলে করোনাভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করলে সেটিকে সহজেই ধ্বংস করতে সক্ষম হয় অ্যান্টিবডি।
ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না প্রভৃতি টিকাসমূহ এই পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় পদ্ধতি বা প্রযুক্তি অনুসারে, বৈজ্ঞানিকভাবে রূপান্তরিত (জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড) করোনাভাইরাস বা সমধর্মী অন্য কোনো ভাইরাসের মৃত নমুনাকে টিকার মূল উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রস্তুতকৃত টিকা মানবদেহে প্রবেশের পর সেই রূপান্তরিত ভাইরাসের নমুনা দেহে থেকে যায় এবং অনুপ্রবেশকারী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে সেটি ধ্বংস করে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা, জনসন, স্পুটনিক ৫, সিনোফার্ম এবং কোভ্যাক্সিন প্রস্তুত করা হয়েছে এই পদ্ধতি অনুসারে।
স্পুটনিক ৫ টিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে আরএডি২৬ এবং আরএডি৫ নামে বৈজ্ঞানিকভাবে রূপান্তরিত দুটি অ্যাডনোভাইরাস (করোনাভাইরাসের সমধর্মী ভাইরাস) ব্যবহার করা হয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও জনসনের করোনা টিকায় ব্যবহার করা হয়েছে একটি করে রূপান্তরিত অ্যাডনোভাইরাস।
২০২০ সালের আগস্টে বিশ্বের প্রথম করোনা টিকা হিসেবে বাজারে আসে স্পুটনিক ৫। রাশিয়ার গামালিয়া ন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের যৌথ উদ্যোগে প্রস্তুত করা হয়েছে এই টিকা।
প্রায় ছয় দশক আগে ১৯৫৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুটনিক নামের একটি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে মহাকাশ জয়ের প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করার কথা ঘোষণা দিয়েছিল। সেই ইতিহাস স্মরণ করেই বিশ্বের প্রথম করোনা টিকার নাম দেওয়া হয় স্পুটনিক ৫।
আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট এক গবেষণা নিবন্ধে জানিয়েছে, করোনার বিরুদ্ধে ৯০ দশমিক ৬ শতাংশ সুরক্ষা দিতে সক্ষম স্পুটনিক ৫। অবশ্য এই টিকার অন্যতম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের দাবি , করোনার বিরুদ্ধে স্পুটনিক ৫-এর সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষমতা ৯৭ দশমিক ৬ শতাংশ।- হিন্দুস্তান টাইমস