জেমস গ্রিফিথসের লেখা এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ার দেশগুলোর বাসিন্দাদের কাছে এ ধরনের ঘোষণা তাদের গৃহীত একটি কৌশলের পুনরাবৃত্তি হবে, যে কাজ ওই অঞ্চলের অনেক দেশ এই সংকটের শুরু থেকে করে এসেছে। এবং সংক্রমণের হার কমিয়ে রাখা ও প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে তা কাজে দিয়েছে বলেই দেখা গেছে।
বিশ্বের অন্যান্য অংশে এই বার্তা বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। কারণ জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, রাজনীতিবিদ ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলে আসছিলেন নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে মাস্ক কোনো কাজে দেয় না। তারা নাগরিকদের প্রতি যথাযথভাবে হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন।
ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল জেরোম অ্যাডামস টুইট করেছিলেন, “মাস্ক কেনা বন্ধ করুন!
“এগুলো করোনাভাইরাস থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষায় কার্যকর নয়। কিন্তু স্বাস্থ্য সেবাকর্মীরা যদি রোগীদের সেবার জন্য এগুলো না পায় তাহলে তা তাদের ও আমাদের কমিউনিটিকে ঝুঁকিতে ফেলবে।”
তার এই টুইট ৪৩ হাজার রিটুইট হয়েছিল।
একই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) পরিচালক রবার্ট রেডফিল্ড পার্লামেন্ট সদস্যদের সামনে হাজির হয়েছিলেন। লোকজনের কি মাস্ক পরা উচিত জানতে চাইলে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, “না।”
কিন্তু করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা বিশ্বের সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় এখন তিনি বিষয়টি নিয়ে দ্বিধান্বিত।
সোমবার রেডফিল্ড বলেছেন, সিডিসি এখন গাইডলাইন পর্যালোচনা করছে এবং কমিউনিটি সংক্রমণ থেকে রক্ষায় সবাইকে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারে।
মহামারীর বিপজ্জনক রূপ দেখে নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলার নীতিমালায় পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও।
সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসাস বুধবার জেনিভায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, “এটা এখনও আমাদের কাছে নতুন একটি ভাইরাস এবং আমরা শিখছি প্রতিনিয়ত। যেহেতু অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে, নতুন তথ্য আসছে, তাতে আমাদের পরামর্শও পরামর্শও বদলাবে।”
গত মাসে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের অনুজীব বিশেষজ্ঞ আড্রিয়েন বুর্চ লিখেছেন, “মাস্ক কাজ করে না বলে শুনলেও আপনি সম্ভবত এই দাবির পক্ষে শক্ত কোনো প্রমাণ দেখেননি। তার কারণ এটার অস্তিত্ব নেই।”
বস্তুত এর বিপরীতটার নজির রয়েছে: মাস্কের ব্যবহার বর্তমান বৈশ্বিক মহামারীর মতো ভাইরাল সংক্রমণ রোধে সহায়তা করে।
বুর্চ একটি গবেষণার প্রতি ইঙ্গিত করেন, যা ২০০৩ সালের সার্স মহামারীর সময় মাস্ক ব্যবহারে সুফল মেলার পক্ষে জোরাল প্রমাণ দেয়। বেইজিংয়ে কমিউনিটি সংক্রমণ নিয়ে একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, সাধারণ মানুষের ধারাবাহিক মাস্ক ব্যবহার ‘সার্স আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৭০ শতাংশ কমানোর পেছনে ভূমিকা রেখেছিল’।
সার্সের মতো কোভিড-১৯ ও শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা ঘটায় এবং এ দুইয়ের পেছনে রয়েছে করোনাভাইরাস নামের একই গোত্রের ভাইরাস।
সার্সও সারা দুনিয়াব্যাপী ছড়ালেও মূলত এর ব্যাপক সংক্রমণ ঘটেছিল এশিয়ায়, বিশেষ করে চীন ও হংকংয়ে। ওই অভিজ্ঞতার প্রতিফলন বর্তমানের বৈশ্বিক মহামারীর শুরুতে দেখা গেছে, ভাইরাস ছড়ানোর খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে ওই অঞ্চলের মানুষ নিজেদের সুরক্ষায় মাস্ক পরা শুরু করে।
শুরু থেকেই হংকংসহ এশিয়ার অনেক দেশের সরকার নাগরিকদের মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়, তাতে সে ভাইরাস আক্রান্ত হোক বা না হোক।
বিষয়টি পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোর একটি অংশের ভ্রূকটি তোলা এবং মাস্কের প্রতি এশিয়ানদের ‘প্রবল টান’ আলোচনার বিষয়বস্তু হলেও তা এই প্রাদুর্ভাবে লাগাম টানতে কাজে দিয়েছে বলেই দৃশ্যমান হয়েছে।
তাওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের্ মূল ভূখণ্ড সবখানে ব্যাপকভাবে মাস্ক ব্যবহার করা হয়েছে এবং তারা ইউরোপ ও আমেরিকার চেয়ে তা নিয়ন্ত্রণে সফলতা দেখিয়েছে সেটা বড় ধরনের প্রাদুর্ভাব হোক বা স্বল্প পরিসরেই হোক না কেন।
হংকং ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ইভান হাং সিএনএনকে বলেছেন, “আপনি যদি হংকংয়ের তথ্য দেখেন তাহলে দেখবেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মাস্ক পরাই সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
“এবং এটা শুধু করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমায়নি, এতে ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগীও কমিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এখন ইনফ্লুয়েঞ্জার মওসুম এবং আমরা খুব কমই ইনফ্লুয়েঞ্জার ঘটনা দেখেছি। এবং সে কারণে মাস্ক শুধু করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেয়নি, একই সাথে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাস থেকেও সুরক্ষা দিয়েছে।”
এই মহামারী শুরুর দিকে সামনের কাতারের দেশের একটি হলেও মার্চের প্রথম দিকে দেশটিতে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দেড়শর মতো। সম্প্রতি ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে লোকজন যাওয়ার আগে তাদের করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা সেভাবে বাড়েনি।