১৯৬৪ সালে জেফ বেজোস যখন জন্ম নেন, তখন তাঁর মা জ্যাকলিনের বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। কিশোরী জ্যাকলিন তখন হাইস্কুলের জুনিয়র শিক্ষার্থী। বেজোসের জন্মের পর পড়াশোনা ব্যাহত হয় জ্যাকলিনের। স্কুল কর্তৃপক্ষ চেয়েছিল তাঁকে না রাখতে। তবে পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় স্কুল কর্তৃপক্ষ নমনীয় হয়। স্কুল শেষ করার পর জেফ বেজোসের বাবা টেড জর্জেনসেনকে ডিভোর্স দেন জ্যাকলিন। ওই সময় জেফের বয়স ছিল মাত্র এক বছর। এরপর নতুন একটি কলেজে ভর্তি হন জ্যাকলিন। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অনেক কষ্ট করেন তিনি। অর্থকষ্ট তো ছিলই, সেই সঙ্গে শিশুসন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ক্লাস করতেন তিনি। সেখানেই কিউবার নাগরিক মাইক বেজোসের সঙ্গে জ্যাকলিনের পরিচয় হয়। পরবর্তীকালে তাঁরা বিয়ে করেন। মাইক বেজোসের নামের সঙ্গে মিল রেখেই জেফের নাম হয়।
জেফ বেজোসের জন্মদাতা বাবা টেড জর্জেনসেন ছিলেন একজন ইউনিসাইক্লিস্ট এবং সার্কাস পারফরমার। অবশ্য পরে আমাজনের সাফল্যের কারণে তাঁর ভাগ্য খুলে যায়। তিনিও শতকোটি ডলার সম্পদের মালিক হন। ২০১৫ সালে ৭১ বছর বয়সে মারা যান টেড জর্জেনসেন। এর আগে এক সাক্ষাৎকারে টেড জর্জেনসেন বলেন, কয়েক দশক ধরে জেফ বেজোসের সঙ্গে তাঁর কখনো দেখা হয়নি। তিনি ঠিক ঠাহরই করতে পারেন না যে তিনিই জেফ বেজোসের বাবা।
বিভিন্ন জিনিস কীভাবে কাজ করে তার প্রকৌশল নিয়ে ছোটবেলা থেকে আগ্রহী ছিলেন জেফ বেজোস। বেজোস যখন খুবই ছোট, তখন থেকেই শুধু স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে নিজের খেলনা খুলে ফেলতেন। হাইস্কুলে যাওয়ার পর বাসার গ্যারেজ ল্যাবরেটরি বানিয়ে ফেলেন।
জেফ বেজোস হাইস্কুলের শিক্ষার্থী থাকার সময় প্রথম ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম ব্যবসা ছিল সামার ক্যাম্পের আয়োজন। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ গ্রেডের শিক্ষার্থীদের জন্য তাঁর ওই সামার ক্যাম্পের নাম ছিল ‘ড্রিম ইনস্টিটিউট’। জেফ বেজোস ও তাঁর গার্লফ্রেন্ড দুজন মিলে এটা চালাতেন। ছয়জন করে শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পে নিতেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে ৬০০ ডলার করে চার্জ নেওয়া হতো।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন জেফ বেজোস। এরপর ১৯৯০ সালের দিকে নিউইয়র্কের ওয়াল স্ট্রিটের বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন বেজোস। ফিটেল ও ডি ই শয়ের মতো বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন তিনি। কর্মদক্ষতায় খুব অল্প সময়ে ডি ই শয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। তবে বেশি দিন চাকরি করেননি বেজোস। চার বছর পর নিজে কিছু করবেন, এমনটা ভেবে চাকরি ছেড়ে দেন।
৩০ বছর বয়সে আমেরিকার পশ্চিম প্রান্তের শহর সিয়াটলে চলে আসেন বেজোস। নিজের জমানো কিছু টাকা, আর পরিবারের সাহায্য নিয়ে নিজের ব্যবসায় এক লাখ ডলারের কিছু বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেন তিনি। ১৯৯৫ সালে চালু হয় আমাজন—অনলাইনে পুরোনো বই বিক্রির দোকান। মাত্র এক মাসের মধ্যেই তার ব্যবসা বাড়তে থাকে। এখানে মজার তথ্য হলো, কোম্পানির প্রাথমিক কাজগুলো হয়েছে বেজোসের বাসার গ্যারেজে বসে।
২০০৩ সালে পশ্চিম টেক্সাসে এক মারাত্মক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়েন বেজোস। ওই দিন আবহাওয়া ছিল খুবই দুর্যোগপূর্ণ। তড়িঘড়ি অবতরণ করতে গিয়ে তাঁকে বহনকারী হেলিকপ্টার এক খালে পড়ে যায়। হেলিকপ্টারের উপরিভাগ নিচের দিকে পড়েছিল এবং অর্ধেক পানিতে ডুবে গিয়েছিল। তবে বড় আঘাত পাননি বেজোস। অবশ্য ওই দুর্ঘটনায় বেজোসের অ্যাটর্নি এলিজাবেথ কোরেলের কশেরুকা ভেঙে গিয়েছিল।