রাফি অষ্ট্রেলিয়ায় পড়াশুনা সম্পন্ন করেই দেশে ফিরেন। তবে দেশের বাহিরে পড়াশুনা অবস্থায় কার রেসিং এর জন্য প্রায়ই ট্রেকে গাড়ি নিয়ে বন্ধুদের সাথে রেসিং করতেন। তিনি বাংলাদেশ র্যালি ক্রস চ্যাম্পিয়নশীপ এ প্রথম বছর অংশগ্রহন করেন এবং দ্বিতীয়বার গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হন রাফি। দেশে ফিরেও থেমে যাননি। বরং দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। চ্যালেঞ্জিং এই স্পোর্টসে নিজের আগ্রহ এবং সমস্যা ও সম্ভাবনার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। অর্থসংবাদের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো ।
অর্থসংবাদঃ দেশে অনেক ধরনের স্পোর্টস রয়েছে কিন্তু কার রেসিং এ আপনার আগ্রহ কেন?
রাফিঃ ছোটবেলা থেকেই গাড়ির প্রতি একটা বিশেষ ঝোঁক ছিল। গাড়ি চালানো, গাড়িকে মডিফাই করা, গাড়ি কে আরো কিভাবে আকর্ষনীয় করা যায় এইসব নিয়ে ভাবতাম। এছাড়াও ছোট থেকেই বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল কার রেসিং এর প্রতি আমার বিশেষ ঝোঁক ছিল । টেলিভিশনে বেশীর ভাগ সময় আমি কার রেসিং দেখতাম। সেখান থেকে গাড়ির রেইসিং এর প্রতি আমার আগ্রহটা জন্মায় । নতুন এবং চ্যালেঞ্জিং কাজ আমার ভালো লাগে। আর মোটর স্পোর্টস যেহেতু অনেক চ্যালেঞ্জিং একটা বিষয় তাই রেসিং এর প্রতি আরও বেশি ভালো লাগা কাজ করে । একই সাথে এই সেক্টরে এখনও বাংলাদেশের কেউ ওইভাবে শুরু করেনি। তাই এখানে একটা সুযোগ আছে দেশের জন্য কিছু করার। তাই শুরু করে রাস্তা দেখাতে চাই, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম এই সেক্টরে আসতে সাহস পায়। বাংলাদেশকে নতুন ভাবে তুলে ধরতে চাই বিশ্বের মাঝে। তাছাড়া ছোটবেলা থেকেই আমার গাড়ির প্রতি একটা আলাদা দুর্বলতা কাজ করে। বাবার কোলে বসে গাড়ি চালানো শিখেছি। দেশের বাহিরে পড়াশুনার সুবাধে কার রেসিং এর আগ্রহটা আরও বেড়ে যায়। অস্ট্রেলিয়াতে আমাদের কার রেসিং এর একটা গ্রুপও ছিল। সেখানে প্রায়ই ৩০০ কিলোমিটারের রেস এ বের হতাম।
অর্থসংবাদঃ আপনার মতে বাংলাদেশে মোটর স্পোর্টস বা কার রেসিং পিছিয়ে রয়েছে কেন?
রাফিঃ পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারন আমাদের দেশে এখনও এটাকে স্পোর্টস হিসেবে গ্রহন করতে সাহস পায়নি। বিকেএসপি যেমন স্পোর্টসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তেমনি কার রেইসিং এর জন্যও এরকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দরকার, যেটা ভারতে আছে। তা নেই বলেই কেউ সাহস পায়না। কারন কার রেসিং খুবই ব্যয়বহুল এবং ঝুঁকিপূর্ন খেলা । আমাদের দেশে এখনও এটাকে খেলা হিসেবে কোন প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহনের সুযোগ করে দেওয়া হয়নি। দেশে অনেক ধরনের স্পোর্টস রয়েছে যেগুলোতে সরকার বা বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান স্পন্সর করার কারনে এখন এগিয়ে যাচ্ছে। স্পন্সরশীপের অভাব অনেকটা বড় বাঁধা এই সেক্টরের পিছিয়ে থাকার জন্য। আমি ভারতে এমইও কাপে অংশগ্রহন করেছি সম্পূর্ন নিজের অর্থায়নে। অথচ অন্যান্য দেশের প্রতিযোগীরা বিভিন্ন স্পন্সরশীপ নিয়ে এসেছে। আমাদের দেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। ফলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে নতুনভাবে পরিচিত করতে এখন উচিৎ এই সেক্টরের জন্য এগিয়ে আসা।
অর্থসংবাদঃ দেশের বাহিরে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করার অনুভুতি কেমন?
রাফিঃ যখন দেশের বাহিরে রেসিং করি তখন ড্রেসের উপর আমাদের দেশের পতাকা থাকে, তখন মনে হয় আমি যেমন একজন মুক্তিযোদ্বার সন্তান হিসেবে গর্বোবোধ করি, তেমনি আমিও তো দেশকে রিপ্রেজেন্ট করছি । তখন ভাবতে ভালো লাগে যে দেশের জন্য সামান্য হলেও কিছু করতে পারছি। আমি বিশ্বাস করি , আমাদের দেশে রেসিং কে স্পোর্টস হিসেবে প্রতিষ্টিত করতে পারি তাহলে সারা বিশ্বে আমাদের কে আরো নতুন ভাবে চিনবে । আমরা যদি সুযোগ পাই তবে আরও বড় বড় প্লাটফর্মে ইন্টারন্যাশনালি দেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারবো । কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল বড় কোন রেসিং কম্পিটিশনে আমাদের দেশ থেকে অংশগ্রহনের জন্য সরকারিভাবে এখনো পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি এজন্য নিজের কাছে খুবই খারাপ লাগে।
অর্থসংবাদঃ ক্যারিয়ার হিসেবে কার রেসিং কে নেওয়া যেতে পারে? কিভাবে শুরু করতে হবে?
রাফিঃ অবশ্যই এটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। রেসিং এ বিশ্বখ্যাত অস্ট্রিয়ান নিকি লাওডা, জার্মানির মাইকেল সুমাকার সহ যারা ইন্টারন্যাশনাল রেসিং গুলোতে পার্টিসিপেট করে তারা খুব ছোট বয়স থেকেই তাদের ক্যারিয়ার গড়তে শুরু করেন। তারা ৮-১০ বছর এর মধ্যেই গো কার্টে উঠে যায় । তাদেরকে গো কার্ট লার্নিং স্কুল গুলোতে ট্রেনিং এর জন্য ভর্তি করা হয় । ভারতেও বিভিন্ন গো কার্ট লার্নিং স্কুল রয়েছে। যারা খুব ছোট থেকে লার্নিং শুরু করে এবং শুরু থেকেই জানতে থাকে আর শিখতে থাকে রেসিং সম্পর্কে । এটা একটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস , বিভিন্ন লেভেল আর বিভিন্ন ক্যাটাগরির রেসিং করে আসতে হয়। সেটার জন্য রেসিং স্কুল দরকার। যেখানে শুধু গাড়ি আর রেসিং নিয়েই পড়াশুনা হবে।