শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন গুতেরেস।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, আমাদের অবশ্যই তালেবানের সঙ্গে সংলাপ বজায় রাখতে হবে। আফগান জনগোষ্ঠীর প্রতি সংহতির মানসিকতা নিয়ে সংলাপে সরাসরিভাবে আমাদের নীতিগুলো নিশ্চিত করতে হবে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আরও বলেন, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, ক্ষুধার যন্ত্রণায় মৃত্যুর মুখে পড়া আফগান জনগণের প্রতি আমাদের সংহতির হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
বিশ্ববাসীর উদ্দেশে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, আফগানিস্তানে ‘অর্থনৈতিক ধস’ অবশ্যই এড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বা বিশ্বব্যাপী জব্দ করে রাখা আফগান তহবিল ছাড়ের আহ্বান জানানো ছাড়াই জাতিসংঘের প্রধান দাবি করেন যে ‘আর্থিক সামগ্রী’ আফগানিস্তানের অর্থনীতির ‘দম নেওয়ার’ সুযোগ করে দেবে।
তবে, তালেবান তাদের গঠিত সরকারের স্বীকৃতি, আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা বলেছে বলে উল্লেখ করেন আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, আর এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্য সাধনের নিশ্চিত সুযোগ করে দেবে।
আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার বিষয়টি আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের জিহাদিদের ওপর কি ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে সে ব্যাপারে জানতে চাইলে গুতেরেস বলেন, এটি তাদেরকে মানসিক ও বাস্তবিকভাবে উৎসাহিত করতে পারে। তারা আশাবাদি হয়ে উঠতে পারে। কয়েক মাস আগে যেটি তারা চিন্তাও করতে পারেনি। সত্যিকার অর্থেই সেখানে ভয়ের কারণ রয়েছে।
উল্লেখ্য, আফ্রিকার দেশ সেনেগালের উত্তরাঞ্চল, মৌরিতানিয়ার দক্ষিণাঞ্চল, মালির মধ্যাঞ্চল, বুরকিনা ফাসো’র উত্তরাঞ্চল, আলজেরিয়ার একেবারে দক্ষিণের এলাকা, নাইজার, নাইজেরিয়া ও ক্যামেরুনের একেবারে উত্তরের এলাকা, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, শাদের মধ্যাঞ্চল, সুদানের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চল, দক্ষিণ সুদানের একেবারে উত্তরাঞ্চল, ইরিত্রিয়া এবং ইথিওপিয়ার একেবারে উত্তরাঞ্চল নিয়ে গঠিত এলাকাটিকে ভৌগলিক ও প্রাকৃতিক সামঞ্জস্য বিবেচনায় ‘সাহেল’ নামে ডাকা হয়। আফ্রিকার এই সাহেল অঞ্চলের বেশকিছু দেশে আল-কায়েদা ও তালেবানের মতোই জিহাদি গোষ্ঠীর শক্ত অবস্থান রয়েছে।
এদিকে, তালেবান সরকার নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও আফগানিস্তানে অর্থ প্রবাহ বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাগিদ দিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, তা না হলে দেশটি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে পড়বে।
আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় এক হাজার কোটি ডলারের সম্পদ বর্তমানে বিদেশে আটকা পড়েছে। এসব সম্পদ আটকে রেখে দেশটির নতুন প্রশাসনের উপর চাপ বাড়াতে চাইছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
তবে জাতিসংঘের আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ দূত দেবোরাহ লিওন বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, দেশটিতে এসব অর্থ প্রবাহের একটি উপায় খুঁজে বের করা দরকার। না হলে দেশটির অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়ার পাশাপাশি সামাজিক শৃঙ্খলাও নষ্ট হতে পারে।
আফগানিস্তানে নানাবিধ সংকটের মধ্যে রয়েছে মুদ্রা সংকট ও খাবারের দাম বৃদ্ধি। মুদ্রা সংকটের কারণে অনেক বেসরকারি ব্যাংকেই নগদ অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার অর্থ সংকটের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানই কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না।
জাতিসংঘ দূত দেবোরাহ লিওন বলেন, কয়েকটি মাস অর্থনীতিকে সচল থাকতে দিতে হবে, তালেবানকে নমনীয়তা প্রদর্শনের সুযোগ দিতে হবে, তবে এবার নিশ্চিয়ই ভিন্নভাবে এগুলো করতে হবে। অর্থের অপব্যবহার ঠেকাতে তদারকির ব্যবস্থাও রাখতে হবে বলে জানান তিনি। সূত্র: বিবিসি, এনডিটিভি।