দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় এই মহানগরটিতে করোনার সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল। এর হাত থেকে নগরবাসীকে সুরক্ষা দিতে ঘর থেকে বাইরে বের হওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এমনকি খাবার কিনতে বাইরে যাওয়ারও অনুমতি ছিল না। এই নগর থেকে বের হওয়া বা ঢোকার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
ভিয়েতনামে করোনায় যত মানুষ আক্রান্ত হয়েছে তার অর্ধেকই ছিল এই শহরের। পাশাপাশি মৃতের সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশও ছিল এখানকারই। দেশটিতে প্রায় ৮ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়।
কর্তৃপক্ষের এমন কঠোর পদক্ষেপের কারণে দ্রুতই করোনা সংক্রমণের সংখ্যা কমে আসে। আজ বিভিন্ন সড়ক থেকে প্রতিবন্ধকতা তুলে নেওয়া শুরু হয়। সরিয়ে নেওয়া হয় শতাধিক তল্লাশিচৌকি।
দীর্ঘদিন পর বাড়ির বাইরে আসার সুযোগ পেয়ে বেশ আনন্দিত ছিলেন ত্রাণ ভান ভু নামের এক ব্যবসায়ী। তাঁর ফল, শাকসবজি ও মাংসের স্টোর রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি খুব খুশি। বিধিনিষেধের কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠানে বেশ প্রভাব পড়েছে। পণ্য সরবরাহ করার মতো আমাদের পর্যাপ্ত কর্মীও ছিলেন না। দুই দিন পর পর তাঁদের করোনা পরীক্ষা করতে হতো। এটি প্রতিষ্ঠানের জন্য বেশ ব্যয়বহুল ছিল।’
তিন মাসের বিধিনিষেধ সরিয়ে নেওয়ার পর শহরের সড়কগুলো বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই খুলেছে। করোনার টিকা গ্রহণকারীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছেন।
যদিও এখনো দেশটির কর্তৃপক্ষ এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে ভ্রমণের ওপর বিধিনিষেধ বহাল রেখেছে, তারপরও হাজারো পরিবারের সদস্যরা যারা এই শহরে আটকা পড়েছিলেন, তাঁরা মোটরসাইকেলে করে শহর থেকে বের হওয়ার জন্য একটি তল্লাশিচৌকিতে জড়ো হয়েছেন।
একসময় করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে রাখার উদাহরণ হিসেবে ভিয়েতনামের নাম উল্লেখ করা হতো। কিন্তু গত এপ্রিলে দেশটির উত্তরাঞ্চলে বাণিজ্যিক পার্ক বলে পরিচিত এলাকায় করোনার চতুর্থ ঢেউ আঘাত হানে, যা দ্রুতই দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ে।
গ্রীষ্মে ১০ কোটি জনসংখ্যার দেশটির এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ ঘরে থাকার নির্দেশনার আওতায় ঘরবন্দী হয়। এ কারণে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদনমুখী শিল্পে ধস নামে ও সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ে। দেশটির সরকারি কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি রেকর্ড পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিল্পপার্কের কারখানা ও পণ্য পরিবহনসুবিধা আবার খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
দেশটির ১০ শতাংশেরও কম মানুষ দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন। তবে হো চি মিন সিটির প্রাপ্তবয়স্ক প্রায় সবাই টিকা পেয়েছেন। সূত্র: এএফপি