বিদেশী বিনিয়োগ প্রবাহ আকর্ষণের দিক থেকে দীর্ঘদিন ধরেই এগিয়ে বস্ত্র ও পোশাক খাত। খাতটিতে এফডিআই প্রবাহ হ্রাস পাওয়ার তথ্যে খাতসংশ্লিষ্টদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তারা বলছেন, সামষ্টিক অর্থনীতির বিচারে এফডিআই প্রবাহ কমে যাওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। তবে খাতটিতে বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক না নেতিবাচক, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে হলে আরো গভীরে গিয়ে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কারণ দেশের পোশাক শিল্পে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা এখন পর্যাপ্ত। এ কারণে খাতটির চেয়ে এটির ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বা পশ্চাত্সংযোগ শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগের প্রয়োজন তুলনামূলক বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সর্বশেষ সমীক্ষা প্রতিবেদন বলছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে টেক্সটাইল অ্যান্ড ওয়্যারিং খাতে এফডিআই প্রবাহ ছিল ৪৫ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৬ কোটি ২৬ লাখ ৬০ হাজার ডলারে। এ হিসাবে খাতটিতে গত অর্থবছরে এফডিআই প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে ৪২ শতাংশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাওয়া জাতীয় স্বার্থে অবশ্যই খারাপ। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বা ভার্টিক্যাল সেটআপে কেউ যদি এফডিআই নিয়ে আসে, তা ভালো এবং আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা পোশাক খাতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পেরে ওঠা সম্ভব হবে না। কারণ বেশির ভাগ বিদেশী বিনিয়োগকারী বিদেশী ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে এদেশে বিনিয়োগ করেন। এদিকে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের প্রকল্প চালাতে হচ্ছে ১৩ শতাংশ সুদে ঋণ করে। ফলে এখানে শুরুতেই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন স্থানীয় বিনিয়োগকারী। এছাড়া বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা, দক্ষতা সবই স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের তুলনায় বেশি। ফলে পোশাক শিল্পে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ওপর বিদেশী বিনিয়োগের প্রভাবকে ইতিবাচক বলা চলে না।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এবং এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, এফডিআই ফরোয়ার্ড লিংকেজ বা পোশাক শিল্পে হোক—এটা আমরা চাই না। ব্যাংকওয়ার্ড লিংকেজ যেমন টেক্সটাইল খাত, এক্ষেত্রে এফডিআইকে স্বাগত জানাই। এছাড়া পোশাক ও বস্ত্রের মেশিনারিজ প্রস্তুতকারক যেমন জুকি, ব্রাদার্স এরা যদি বাংলাদেশে মেশিন অ্যাসেম্বল করতে বিনিয়োগ করে, তাহলে তা আমাদের ভ্যালু অ্যাড করবে ও কর্মসংস্থান বাড়াবে।
এদিকে পোশাক খাতের রফতানি হ্রাসের ধারাও অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পোশাক রফতানি কমেছিল ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এ ধারা অব্যাহত রয়েছে ডিসেম্বরেও। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সরবরাহ করা সংকলিত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে বিজিএমইএ বলছে, চলতি অর্থবছরের আগস্টে পোশাক রফতানি কমে ১১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। দুই অংকের ওই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি সেপ্টেম্বরে এক অংকে নেমে হয় ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। অক্টোবরে পোশাক রফতানি কমে ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আর নভেম্বরে পোশাক রফতানি কমেছিল ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ।