যেহেতু শুধু আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন এই ক্ষমতার অধিকারী সেক্ষেত্রে তাঁর আশীর্বাদ বিশ্বের মানুষ তথা আমাদের, আমার দরকার। তা পেতে হলে অভিশপ্ত হলে চলবে না। আমাদের আচরণ, আমাদের কর্মের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে অভিশাপ বা আশীর্বাদ। আমরা সবাই আশীর্বাদ চাই এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই, তবে কিছু পেতে কিছু দিতে হয়। এই দেওয়া নেওয়া নিয়ে আমার ভাবনা থেকে কিছু রিফ্লেকশন করতে চাই। প্রথমে শিক্ষা প্রশিক্ষণ দিয়ে শুরু করি।
জন্মের শুরু অর্থাৎ মাতৃগর্ভ থেকেই আমাদের শিক্ষা শুরু হয়েছে। মাতৃগর্ভে থাকাকালীন যে শিক্ষা আমরা পেয়ে থাকি সেটা বেসিক শিক্ষা। মাতৃগর্ভ থেকে বের হয়ে পৃথিবীর শিক্ষা গ্রহণ করা এটাই হচ্ছে মানুষ জাতির জন্য চালেঞ্জ। এই চালেঞ্জ যদি মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হই তাহলে সম্ভব হবে কি সৃজনশীল মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকা? ইদানীং বিশ্বের উন্নত দেশের ছেলেমেয়েরা দীর্ঘমিয়াদি শিক্ষা গ্রহণ করতে খুব একটা আগ্রহী নয়। কারণ কী? কারণ অনেক, তার মধ্যে যেটা বেশি অ্যাট্রাকটিভ সেটা হলো যদি অল্প শিক্ষা গ্রহণ করেই ভালো অর্থ কামাই করা সম্ভব তবে কেন খামাখা সময় নষ্ট করে তারা অধিক শিক্ষা গ্রহণ করবে? এমনটি প্রশ্ন করা স্বাভাবিক। যদি কলেজ পাশ করার সাথে সাথে ভালো জব জোগাড় করা সম্ভব হয় তাহলে কেন সেটা না করে চার থেকে ছয় বছর ধরে অর্থ এবং সময় ইনভেস্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে?
অন্যদিকে পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে কলেজ পাশ করা শিক্ষার্থী দিব্যি ওয়ান দি জব ট্রেনিং-এর মাধ্যমে যেমন অর্থ কামাই করছে একইসাথে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হতে পারে উচ্চ শিক্ষা না হলে চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়। এটা সঠিক নয় কারণ বেশির ভাগ কাজে বেসিক শিক্ষার যোগ্যতায় ম্যানেজ করা সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা সচরাচর জীবনকে হাসি তামাশা থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। আনন্দ ফুর্তি বিলাহবহুল জীবনের গতি থামিয়ে দেয়। যারা যতবেশি পড়ে তারা ততবেশি পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে, কারণ তারা সারাজীবন পরের চিন্তা চেতনার উপর শিক্ষা গ্রহণ করার কারণে নিজেদের চিন্তা চেতনার বহিঃপ্রকাশ করতে পারে না। ফুল যখন কুঁড়ি অবস্থায়ই ঝরে পড়ে তখন তা না দেয় মধু না দেয় ফল। মানুষ জাতির জন্মের সার্থকতার পরিপূর্ণতা লাভ তখনই হয় যখন সে নিজ জায়গা থেকে ইউনিক। ইউনিক মানুষ আশীর্বাদ আর যারা ইউনিক নয় তারা অভিশাপ। বর্তমান বিশ্বে সব ন্যাটার পিছে পূঁথিগত শিক্ষাধারী মানুষ জড়িত এবং এরা সবাই অভিশপ্ত। যে শিক্ষায় সুশিক্ষার অভাব সে শিক্ষা অভিশাপ।
গত বিশ বছর প্রযুক্তির পিছে সময় দেবার কারণে অন্যান্য বিষয়ে মানুষ জাতি উন্নতির ধারায় যে গতি তা থেকে পিছিয়ে পড়েছে। পৃথিবী সৃষ্টির পর এমনটি হয়নি এর আগে। যদিও অতীতেও এমনটি ছিল যেমন খাদ্যের সন্ধানে হয়তো অনেক কিছুর পর্যাপ্ত পরিমান গুরুত্ব দিতে পারেনি কিন্তু এ যুগে কিছু বাদ দিয়ে বা ধীরগতিতে রেখে শুধু একটি বিষয়ে নজর দেওয়ার ফলে বিশ্বে অরাজকতা, বর্বরতা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি বৃদ্ধি পেয়েছে। মুষ্টিমেয় খুব কম সংখ্যক মানুষ নতুনত্বের জন্য কাজ করছে বাকিরা শুধু ব্যবহার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের জীবন এখন পাসওয়ার্ডের মধ্যে সীমাব্দ। পাসওয়ার্ড আছে তো ব্যবহার করতে সক্ষম হচ্ছি, পাসওয়ার্ড নেই মানে ব্যবহার থেকে বঞ্চিত। বাংলা লোক গানের একটি লাইন বড্ড মনে পড়ছে “ দয়াল বাবা কলা খাবা গাছ লাগাইয়া খাও”।
পৃথিবীতে user-এর সংখ্যা বেশি হবার কারণে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা সীমিত মানুষের কাছে বিদ্যমান যার ফলে মানুষে মানুষে বড় আকারে ভেদাভেদ দেখা যাচ্ছে সর্বত্র। আমরা নিজ থেকে কিছু করার প্রবণতা হারাতে শুরু করেছি। সারাক্ষণ অন্যে করবে আর আমরা ভোগ করবো এমনটি মনমানসিতা এখন আমাদের মধ্যে। তারপর পরনিন্দা এবং পরচর্চা করতে পাকা। এতক্ষণ ধরে সমস্যার কথা তুলে ধরলাম। সমাধান কোথায়? সমাধান শিশুশিক্ষায়। শিশুশিক্ষার উপর জোর দিতে হবে এবং টিনএজের মধ্যেই মানুষের দায়ভার মানুষের উপর ছেড়ে দিতে হবে।
প্রত্যেক ব্যক্তির বাঁক স্বাধীনতা, দায়িত্ব, কর্তব্য, অধিকার এবং বাধ্যবাধকতা বুঝিয়ে দেবার দায়িত্ব বাবা-মার, সমাজের এবং রাষ্ট্রের। এগুলো পালন করার দায়ভার প্রত্যেক ব্যক্তির। এই সহজ সমীকরণের সমাধানই একমাত্র মানব জাতির জন্য আশীর্বাদ। উপরে বলেছি কিছু পেতে কিছু দিতে হবে। আশীর্বাদ পেতে অভিশাপ ত্যাগ করতে হবে। ঐযে বললাম ক্ষমতা, জ্ঞান, বিশ্বাস যেটা আমি পারি অন্য কেউ পারবে না এধরণের মন-মানসিকতা মন থেকে সরাতে হবে। দ্যি সুনার দ্যি ব্যাটার, কারণ বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।
সর্বোপরি যখন কেউ আপনার মতামত চায়, তখন মনে করবেন এটি সম্মানের চিহ্ন। কারণ তারা আপনার জ্ঞান, দক্ষতা বা রুচির মূল্য দেয়। যখন তারা আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে দ্বিধা করে না, মনে করবেন এটি বিশ্বাসের চিহ্ন। তাদের বিশ্বাস আছে যে এটি আপনার অহংকার বা হুমকি নয়, বরং নিজের আত্মবিশ্বাস বেড়ে ওঠার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করবেন।
অনেকে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে গেছে, নাকি তারা কেবল বেড়াতে এসেছিল? আমরা যখন আকাশের দিকে তাকাই তখন মনে করি তারা আমাদের দেখতে পারছে। আমরা প্রায়ই তাদের স্মরণ করি। স্মরণ করি সকালে, রাতে। বিশেষ করে যখন আমরা তাঁরার দিকে তাকাই। স্মরণ করি একটি নির্দিষ্ট তারিখ, একটি ঘটনা, একটি স্থান, একটি ঘ্রাণকে। স্মরণ করি প্রতিটি ঘণ্টা, প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি সেকেন্ডে আমাদের নিঃশ্বাসকে। স্মরণ করি যারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে তাদেরকে। যদি আপনি স্বর্গ থেকে কাউকে মিস করেন তবে নির্দ্বিধায় লিখাটি শেয়ার করুন, দেখবেন আপনার বেশ ভালো লাগবে।
লেখক: সাবেক পরিচালক, প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট
ই-মেইল: rahman.mridha@gmail.com