এটি অত্যন্ত দ্রুত এবং সহজে ছড়াতে পারে এবং মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়াতে পারে। যার ফলে এর বিরুদ্ধে টিকা কম কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সে কারণেই ওমিক্রন নিয়ে বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন।
করোনাভাইরাস যত সহজে ছড়াবে, ততই এতে আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি হবে। এর ফলে গুরুতর অসুস্থ হওয়া এবং মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে থাকবে।
প্রাথমিক তথ্য প্রমাণে দেখা গেছে যে, ওমিক্রনে পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। অর্থাৎ যারা আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সাধারণত দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হবার দৃষ্টান্ত কম। কিন্তু ওমিক্রনের ক্ষেত্রে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন। কিন্তু টিকা নেওয়া এসব মানুষ কতটা নিরাপদ তা নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, সিনোভ্যাক, স্পুটনিক এসব টিকা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর হবে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সে কারণেই ওমিক্রন নিয়ে ভয় বাড়ছে। ভাইরাস সবসময়ই পরিবর্তিত হচ্ছে, প্রতিনিয়ত মিউটেশনের মাধ্যমে নতুন রূপ নিচ্ছে।
চীনের উহান শহরে প্রথম যে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছিল সেই ভাইরাস এখন আর নেই। ডেল্টা আর বেটা ভ্যারিয়েন্ট তাকে হটিয়ে দিয়েছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে মিউটেশন ছিল ১০টি আর বেটায় ৬টি। আর ওমিক্রনের ‘ইউনিক’ মিউটেশনের সংখ্যা এগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। এখন পর্যন্ত এর মিউটেশন হয়েছে ২৬ বার। এতেই বোঝা যাচ্ছে করোনার এই নতুন ধরন মোকাবিলা করা কত কঠিন হতে পারে।
ওমিক্রন প্রথম চিহ্নিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই এটি পৃথিবীর অন্তত ১১টি দেশে শনাক্ত হয়েছে।
ওমিক্রন যেন ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য বিভিন্ন দেশ নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করতে শুরু করেছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসকরা বলছেন, এখন পর্যন্ত ওমিক্রনের সংক্রমণে রোগীদের মধ্যে খুবই মৃদু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের প্রধান এ্যানজেলিক কোয়েৎজি বিবিসিকে বলেন, এখন পর্যন্ত দেশটি ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা সামান্য বেড়েছে। কিন্তু ওমিক্রনে আক্রান্তদের অধিকাংশেরই হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার দরকার হয়নি।
তিনি আরও বলেন, হয়তো এর লক্ষণ অত্যন্ত মৃদু বলেই এই নতুন ধরনটি এতদিন শনাক্ত হয়নি।বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কোয়েৎজে বলেন, প্রথম যে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আমরা পেয়েছিলাম তিনি একজন পুরুষ তার বয়স ছিল ৩০-এর কোঠায়। তিনি দু’দিন ধরে প্রচণ্ড ক্লান্তি অনুভব করছেন বলে জানিয়েছেন।
এছাড়াও গায়ে ব্যথা, মাথাব্যথা রয়েছে তার। তবে তার কাশি ছিল না বা স্বাদ-গন্ধও ঠিক ছিল। এরকম লক্ষণ তার কাছে অস্বাভাবিক মনে হওয়াতে তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। এতে তিনি এবং তার পরিবারের সবাই পজিটিভ ধরা পড়লেও পরিবারের অন্যরা ভালো ছিল।
এ্যানজেলিক কোয়েৎজি বলেন, এরপরেই একদিনে আমি আরও কয়েকজন রোগী দেখি। তারাও সবাই পজিটিভ ছিল। এ বিষয়ে আমি টিকা সংক্রান্ত সরকারি কমিটিকে সতর্ক করি। আমি নিজেও ওই কমিটির সদস্য।
তিনি বলেন, আমরা দক্ষিণ আফ্রিকায় যা দেখছি তা হলো সংক্রমিত সবারই লক্ষণ আমাদের বিবেচনায় অত্যন্ত মৃদু। আমরা কাউকেই হাসপাতালে ভর্তি করাইনি। আমি অন্য একজন সহযোগী ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও একই চিত্র তুলে ধরেছেন।
কোয়েৎজি বলছেন, যদিও এখন পর্যন্ত ওমিক্রন আক্রান্তদের উপসর্গ খুবই মৃদু বলে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু দুসপ্তাহ পর হয়তো এই চিত্রটা বদলে যেতে পারে। ওমিক্রন বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের পরপরই বিভিন্ন দেশ তড়িঘড়ি করে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার নেতারা এর সমালোচনা করেছেন। তারা অভিযোগ করছেন যে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটি আবিষ্কার করার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে সাধুবাদ দেওয়ার পরিবর্তে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে ।
ওমিক্রন কতটা মারাত্মক সে চিত্রটা এখনো স্পষ্ট নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার আরও কয়েকজন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ওমিক্রনে ঠিক কতটা অসুস্থতা দেখা দিতে পারে সে চিত্রটা এখনো পরিষ্কার নয়।
এক চিকিৎসক জানাচ্ছেন, প্রথমদিকে আক্রান্তদের লক্ষণ ছিল মৃদু। আরেকজন চিকিৎসক বলছেন, তিনি তরুণ-বয়স্ক কিছু রোগী দেখেছেন যাদের মাঝারি থেকে গুরুতর অসুস্থতা দেখা দিয়েছিল।
আফ্রিকা হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটির ফ্যাকাল্টি সদস্য এ্যালেক্স সিগাল ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, এখনই কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোটা ভুল হবে, তবে বলা যায় যে আমরা আগে যা দেখেছি, এটা তার চেয়ে খুব বেশি ভিন্ন বলে মনে হচ্ছে না। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু করবে এমন কোন ইঙ্গিত এখনো নেই বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।