সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে চলমান করোনাভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতি ও সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর এর বিরূপ প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় ডিসিসিআই নেতাদের।
আলোচনায় এ আহ্বান জানানো হয়েছে বলে গতকাল পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
দেশের অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (এমএসএমই) কথা বিবেচনায় বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণাসহ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে আলোচনায় ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা সত্ত্বেও ব্যাংক থেকে ঘোষিত প্যাকেজের আওতায় কুটির, এমএসএমই খাতের ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রাপ্তি সহজতর নাও হতে পারে।
বেশির ভাগ কুটির, এসএমই, এমএসএমই এবং নগদ লেনদেননির্ভর ব্যবসাগুলো ঋণপ্রাপ্তির আবশ্যকতা পূরণের অভাবে অথবা বৃহৎ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মতো ব্যাংকের সঙ্গে ততটা ভালো সম্পর্ক না থাকার দরুন প্রণোদনার টাকা থেকে ঋণপ্রাপ্তিতে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। যদিও তারা ব্যবসা পরিচালনায় যথেষ্ট অনুবর্তী।
এর সমাধানস্বরূপ এমএসএমইর প্রণোদনার টাকা এমএসএমই খাতের ব্যবসায়ীদের প্রদান করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সম্পৃক্ত করে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মনে করে ডিসিসিআই। এদিকে ক্রমান্বয়ে কীভাবে কিছু কিছু ব্যবসা-বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে পুনরায় চালু করা যায়, তার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করার জন্য ডিসিসিআই অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানায়।
নতুন এমএসএমই যাদের ব্যবসা পরিচালনার অভিজ্ঞতা সর্বোচ্চ দুই বছর বা তারও কম, তাদের ব্যবসা পুনঃনিবন্ধন ফি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল, ব্যাংকসংক্রান্ত অন্যান্য চার্জ এবং আমদানি-রফতানিসংক্রান্ত বন্দরের চার্জগুলো মওকুফ করা যেতে পারে।
এ ধরনের এমএসএমইদের দুই বছরের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় ১ শতাংশ সুদে চলতি মূলধন হিসেবে ‘ব্যবসায় পুনরুদ্ধার তহবিল’ প্রদান করা যেতে পারে। যেহেতু এ মুহূর্তে চলাচলের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। আর এ সময়টাতে যেসব এমএসএমই ই-কমার্সের সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ই-কমার্স ব্যবসায় যাতে আরো এমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা আগ্রহী হতে পারেন, তাই তাদের ভ্যাট-ট্যাক্স অব্যাহতি দেয়া অথবা নগদ প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি। তার মতে, অপ্রচলিত খাত যেমন ভাসমান ব্যবসায়ী, হকার, ভাসমান দোকান, মুদি এবং এক ব্যক্তিনির্ভর একক ব্যবসায়ী যারা আছেন তাদের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় নিয়ে এসে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে স্বল্প সুদে ব্যবসা পুনর্গঠন জরুরি তহবিল প্রদান করা যেতে পারে।
এছাড়া যথাযথ সম্পৃক্ততার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠনগুলোর কাছ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ গ্রহণ করে সেই অর্থ বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজের সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে। নিম্ন আয়ের মানুষ ও অসহায়দের খাদ্যনিরাপত্তা এবং অপ্রচলিত খাতের শ্রমিকদের আর্থিক সহযোগিতার বিষয়গুলোও এ সময় আলোচনায় উঠে আসে।
এ সময় অর্থমন্ত্রী সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ওপর জোরারোপ করে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে সর্বস্তরের মানুষের কথা বিবেচনায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বচ্ছ আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের লক্ষ্যে নীতিমালা গ্রহণ করেছে। স্বল্প সুদে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে প্রণোদনা প্যাকেজকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
তিনি আরো জানান, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার এরই মধ্যে নানা পদক্ষেপ ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আর এসব পদক্ষেপ ও কর্মসূচি অত্যন্ত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে নেয়া হয়েছে। ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে গৃহীত এসব পদক্ষেপ ও কর্মসূচির জন্য অর্থমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান।