বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ভিয়েতনামের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড এপিডেমিওলজির পরিচালক ড্যাং ডুক আনহ বলেন, চলতি বছরে দেশজুড়ে লকডাউনের দেওয়ার সম্ভবনা খুবই কম। ভিয়েতনাম সফলতার সঙ্গে টিকাদান কর্মসূচি সম্পন্ন করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
গত বছর ভিয়েতনামে কঠোর লকডাউন বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে নেতিবাচক প্রভাব রেখেছে। ওমিক্রন সংক্রমণের রেকর্ড সত্ত্বেও কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভিয়েতনাম সরকার। এতে জুতো, পোশাক কারখানা থেকে শুরু করে স্মার্টফোন ও পিসি নির্মাতা কোম্পানিগুলো সচল থাকছে।
ভিয়েতনামে রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ২৬ হাজার নতুন সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে, যা গত বছরের দৈনিক রেকর্ডের প্রায় দ্বিগুণ। তবে বেশির ভাগ কারখানা শ্রমিক টিকা গ্রহণ করায় এবং ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ততটা প্রাণঘাতী না হওয়ায় কারখানা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভিয়েতনাম। গত বছর নাইকি, জারা, অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের মতো কারখানা কয়েক মাস বন্ধ থাকলেও এবার সচল রাখতে যাচ্ছে তারা।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে করোনা নীতিমালা শিথিল করছে ভিয়েতনাম। গত সপ্তাহ থেকে স্কুলগুলো চলছে এবং রোববার থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী ফ্লাইটে বিধিনিষেধ তুলে দিয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, প্রায় ৭৬ শতাংশ জনগোষ্ঠী অন্তত দুই ডোজ টিকা গ্রহণ করেছে।
২০২২ সাল নিয়ে বেশ আশাবাদী দি আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন হ্যানয়। ভিয়েতনামে মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডাম সিটকফ জানান, দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের সম্ভাবনা দেখছি না। সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে রাখার মতো এবং কর্তৃপক্ষ অনুধাবন করেছে অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়া কঠোর লকডাউন টেকসই সমাধান নয়।
চলতি বছর ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চায় ভিয়েতনাম। গত বছর যেখানে তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ। চীনের পর যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক ও জুতো রফতানিকারক দেশটির জন্য কারখানা সচল রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিয়েতনামের এ সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে জটিলতা নিরসনে ভূমিকা রাখবে। গত বছর সরবরাহ চেইন সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে।
অ্যাকাউন্টিং ফার্ম ইওয়াইয়ের অংশীদার ডাক মিন এনগুইয়েন বলেন, ভিয়েতনাম যদি কারখানা কার্যক্রম শক্তিশালী রাখে তাহলে তা প্রকৃতপক্ষে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে উপকৃত হবে কৃষি, বস্ত্র ও ইলেকট্রনিকস খাতের ভোক্তারা।
গত এক দশকে চীনের বিকল্প ম্যানুফ্যাকচারিং কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে ভিয়েতনাম। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ধাক্কা সামলাতে পারলে সামনের দিনগুলোতে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটি। বর্তমান ওমিক্রন ঢেউয়ের কারণে কঠোর লকডাউনে গিয়েছে বেইজিং।
ভিয়েতনাম টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ট্রুং ভন ক্যাম জানান, নতুন চান্দ্র বর্ষের ছুটি শেষে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ বস্ত্র ও পোশাক খাতের কর্মীরা কাজে ফিরেছেন। গত বছর যে আয় হারিয়েছে তা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন কারখানা শ্রমিকরা। ভিয়েতনামের কারখানা শ্রমিকরা মাসে গড়ে ৩৩০ ডলার আয় করছেন।