৮৬ শতাংশ কোম্পানির দরপতন, একদিনেই সূচক হারাল শতাধিক পয়েন্ট

৮৬ শতাংশ কোম্পানির দরপতন, একদিনেই সূচক হারাল শতাধিক পয়েন্ট
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের শেয়ারবাজারে বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজারে লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৮৬ শতাংশেরই শেয়ারদর কমেছে। চলতি বছরের মধ্যে আজ প্রথমবারের মতো শতাধিক পয়েন্ট হারিয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার।

তবে বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচকের পতন হলেও টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। যদিও লেনদেনের এই পরিমাণ বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বস্তির নয়।

আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ১০৯ পয়েন্ট হারিয়েছে। বর্তমানে সূচকটি অবস্থান করছে ৬ হাজার ৮৩৯ পয়েন্টে।

বাছাই করা কোম্পানিগুলোর সূচক ‘ডিএসই৩০’ বৃহস্পতিবার ৩৫ পয়েন্ট কমেছে। আর শরীয়াহভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সূচক ‘ডিএসইএস’ হারিয়েছে ২২ পয়েন্ট।

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে একদিনে এত বড় পতনের কারণের মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাত অন্যতম বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদের সঙ্গে বৃহস্পতিবারের বাজার পরিস্থিতি কথা হয় অর্থসংবাদের। জানতে চাওয়া হয় একদিনে শেয়ারবাজারে শতাধিক পয়েন্ট হারানোর কারণ। এই বিশ্লেষক মনে করেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাতের প্রভাব বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে পড়েছে। তবে এটিই বড় পতনের একমাত্র কারণ নয়।

অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে বেশ কয়েকদিন ধরেই সূচক কমছে। এর মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাতের খবর শুনে আমাদের বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আতঙ্কিত হয়েছেন। তাই সূচকে এর বড় প্রভাব পড়েছে।



পতনের ভূমিকায় যেসব কোম্পানি

সূচকের বড় পতনের প্রধান ভূমিকায় ছিল গ্রামীনফোন। কোম্পানিটির শেয়ারদর কমায় আজ ডিএসইর সূচক হারিয়েছে ২৮ পয়েন্টের বেশি।

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো এবং স্কয়ার ফার্মা মিলে সূচক কমিয়েছে আরও ১০ দশমিক ১৭ পয়েন্ট।

আর লাফার্জ হোলসিম, রবি এবং পাওয়ার গ্রিডের কারণে সূচক হারায় আরও ৮ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট।

এছাড়াও ওরিয়ন ফার্মা, তিতাস গ্যাস, ব্র্যাক ব্যাংক এবং বিএসআরএম স্টিলের কারণে আরও ৬ দশমিক ১১ পয়েন্ট।

এই দশ কোম্পানি মিলে সূচক কমিয়েছে ৫৩ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট।

বড় পতন ঠেকালো যারা

সূচকের আরও বড় পতন ঠেকিয়েছে ওয়ালটন হাই-টেক। কোম্পানিটির কারণে আজ সূচকে ৪ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট যোগ হয়েছে।

এছাড়াও বেক্সিমকো গ্রীন সুকুক, অলিম্পিক, বিকন ফার্মা, প্যাসিফিক ডেনিমস্, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, ড্রাগন সুয়্যেটার, রিংশাইন, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইভিন্স টেক্সটাইল মিলে সূচকে আরও ৩ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট যোগ করেছে।

এই দশ কোম্পানির কারণে সূচক বেড়েছে ৮ দশমিক ২৪ পয়েন্ট।

সব সূচকের পতনের দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। আজ ডিএসইতে ১ হাজার ৫০ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে (বুধবার) লেনদেন হয়েছিল ৮৮৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইতে ৩৭৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩২৬টি কোম্পানিই আজ দর হারিয়েছে, দর বেড়েছে মাত্র ৩০ টি কোম্পানির। বাকি ২১টি কোম্পানির শেয়ারদর আজ অপরিবর্তিত ছিল।

দরবৃদ্ধির শীর্ষে যেসব কোম্পানি

সূচকের শতাধিক পয়েন্টের পতনের দিনে ডিএসইতে প্যাসিফিক ডেনিমসের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল সবচেয়ে বেশি। একদিনে কোম্পানিটির শেয়ারদর যতটুকু বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব ততটুকু বেড়েছে। আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ১ টাকা ২০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ বেড়েছে। ফলে কোম্পানিটি আজ ডিএসইর টপটেন গেইনার তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে।



তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা ক্রাউন সিমেন্টের শেয়ারদর বৃহস্পতিবার ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। আর তৃতীয় স্থানে থাকা নূরানী ডাইংয়ের শেয়ারদর বেড়েছে ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

এছাড়াও, ইভিন্স টেক্সটাইলের ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, ড্রাগন সোয়েটারের ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ, প্রিমিয়ার সিমেন্টের ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ, জাহিনটেক্সের ২ দশমিক ৫০ শতাংশ, এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ডের ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ, রিং শাইন টেক্সটাইলের ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং ডেল্টা স্পিনার্সের শেয়ারদর ১ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়েছে।

দরপতনের শীর্ষে যারা

বৃহস্পতিবার ইমাম বাটনের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ ছিল সবচেয়ে বেশি। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারদর ৬ দশমিক ৬১ শতাংশ কমেছে।

এছাড়াও, ইয়াকিন পলিমারের ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ, এডিএন টেলিকমের ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ, এপেক্স স্পিনিংয়ের ৬ দশমিক ২১ শতাংশ, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ, তুংহাই নিটিংয়ের ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ, বিডি ওয়েল্ডিংয়ের ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ, রিলায়েন্স ওয়ান মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ, বিডি ল্যাম্পসের ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ কমেছে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত