রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি যখন ইউক্রেন আক্রমণ করলো, তার কয়েক ঘণ্টা পরেই মস্কো সফরে গিয়ে রুশ প্রেসেডন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। যুদ্ধের মধ্যে তার এই সফরের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও এর পশ্চিমা মিত্ররা। তবে শুরু থেকেই ইমরানের সফরের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে আসছে ইসলামাবাদ প্রশাসন। তাদের মতে, এটি একান্তই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সংক্রান্ত একটি সফর ছিল। এর সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো সম্পর্ক নেই।
গত সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) টেলিভিশনের এক ভাষণেও নিজের সফরের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন ইমরান খান। তিনি বলেছেন, আমরা সেখানে গিয়েছি, কারণ রাশিয়া থেকে আমাদের ২০ লাখ টন গম আমদানি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমরা প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির জন্য তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছি, কারণ পাকিস্তানের গ্যাসের মজুত কমে যাচ্ছে।
পুতিনের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক প্রসঙ্গে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইনশাল্লাহ, সময়ই বলে দেবে, আমাদের আলোচনা অসাধারণ ছিল।
রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের কিছুদিন আগে যুদ্ধবিরোধী বার্তা নিয়ে মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ। ওই বৈঠকে পুতিন-ম্যাক্রোঁর দূরে বসে কথা বলার দৃশ্য বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। যদিও এর পেছনে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারণ দেখিয়েছে উভয় পক্ষ, তবে অনেকেই বলেছেন, এটি পশ্চিমাদের সঙ্গে মস্কোর নীতিগত দূরত্বেরই প্রতিচ্ছবি।
অথচ এর কয়েক সপ্তাহ পরে ইমরান খান যখন রাশিয়া সফরে যান, পুতিন ঠিকই তার পাশে দাঁড়ান, হাতে হাত মেলান, হাসি মুখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা করেন। তবে ওই বৈঠকে ইউক্রেন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না তা জানায়নি কোনো পক্ষ।
বৈঠক পরবর্তী এক বিবৃতিতে পাকিস্তান সরকার শুধু বলেছিল, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, পাকিস্তান আশা করে কূটনীতির মাধ্যমে সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো যাবে।
পাকিস্তানি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ইমরান খানের মস্কো সফরের সূচি ইউক্রেন যুদ্ধের অনেক আগেই তৈরি ছিল। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোই এর একমাত্র লক্ষ্য।
ইমরানের সফরে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল পাকিস্তান স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইন। প্রায় ১১শ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রস্তাবিত এই পাইপলাইন দিয়ে বন্দরনগরী করাচি থেকে পাঞ্জাব প্রদেশ পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ হবে। ২৫০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিতব্য এই পাইপলাইন দিয়ে বছরে ১ হাজার ২৪০ ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পাইপলাইনের কারণে রাশিয়ার গ্যাস রপ্তানি না বাড়লেও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু গ্যাস পাকিস্তানে সরে যেতে পারে, যা ইউরোপকে রাশিয়ান প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলবে। অর্থাৎ, পশ্চিমাদের চাপে রাখতেই পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে রাজি রাশিয়া। আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ার কারণেও পাকিস্তান প্রতিবেশী চীন-রাশিয়ার আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।