এবারের নিষেধাজ্ঞার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ইউরোপ রাশিয়ার সবচেয়ে বড় শক্তি জ্বালানিতে নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কারণটা খুব পরিষ্কার, রাশিয়ার গ্যাস না পেলে ইউরোপের শীতপ্রধান দেশগুলো বিপদে পড়বে। এই গ্যাস দিয়ে যে তাদের ঘরবাড়ি গরম করতে হয়। শিল্পকারখানাও চলে এই গ্যাস দিয়ে। তবে যুদ্ধের কারণে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় ইতিমধ্যে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ১১৩ ডলারে উঠে গেছে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইউক্রেনকে শক্তিশালী করতে সব রকমের সাহায্য করবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে কোনোরকম প্রত্যক্ষ সংঘাতে জড়াবে না তারা। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের জোটসঙ্গীরা অন্য ন্যাটো দেশগুলোকে বাইরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সব সময় তৎপর থাকবে বলেও তিনি জানান। ইতিমধ্যে তারা আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
যুদ্ধ শুরুর পরপরই রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের ‘সুইফট’ ব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়া হবে বলে জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, কয়েকটি রুশ ব্যাংককে সুইফট থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ওই ব্যাংকগুলো গোটা বিশ্বে আর কাজ করতে পারবে না। ধাক্কা খাবে রাশিয়ার আমদানি-রপ্তানি। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উরসুলা। সেই সঙ্গে রুশ ধনকুবেরদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক বাজারের সম্পদ ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এরপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আসতে থাকে। সব রুশ বাণিজ্যিক বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করেছে বেলজিয়াম। পাল্টা স্লোভেনিয়া, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়ার বিমানের জন্য বন্ধ হয়েছে রুশ আকাশসীমা। এরপর ভিসা ও মাস্টারকার্ড বলেছে, রাশিয়ায় তাদের সেবা বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া মার্কিন কোম্পানি অ্যাপল ও নাইকিও রাশিয়ায় সেবা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে।
এসবের প্রভাব ইতিমধ্যে অনুভূত হতে শুরু করেছে। রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের মান ৩০ শতাংশ পড়ে গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার এক লাফে দ্বিগুণ করেছে।
তবে তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্বের তেল উৎপাদনকারীদের পোয়াবারো। তারা কিছুদিন চুটিয়ে ব্যবসা করতে পারবে। এর মধ্যে ইরানের আবারও মাঠে ফেরত আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা মনে করছেন, তেলের সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় এখন ইরান আবারও তেলের বাজারে ঢুকতে পারে। এই সুযোগে দেশটির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
ফলে গণপরিসরে এখন আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে, সুইফট কি নতুন যুগের পারমাণবিক বোমা। বিষয়টি অনেকটা এ রকম হয়ে দাঁড়িয়েছে যে সুইফটের জোর বেশি, নাকি অস্ত্রের জোর বেশি—আগামী কয়েক দিনে বিশ্ববাসী সেটাই দেখার অপেক্ষায়।