ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যার বেশির ভাগই অর্থনৈতিক। এর জবাবে রাশিয়াও নানা ধরনের পালটা ব্যবস্থা নিচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে জ্বালানি ও খাদ্যমূল্য মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় দেশগুলোতে খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে তুলেছে। এর প্রভাবে সামাজিক অস্থিরতায় ইন্ধন যোগাতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কারমেন রেইনহার্ট।
রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোর ওপর প্রভাব দেখা দেবে। এসব দেশ এখনই খাদ্যনিরাপত্তার অভাবে রয়েছে, সামনে আরো দুর্দিন আসছে। তিনি বলেন, আমি নাটকীয় কিছু বলতে চাই না, কিন্তু এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে আরব বসন্তের নেপথ্যে খাদ্যনিরাপত্তার অভাব এবং দাঙ্গার যোগসূত্র ছিল।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের তিউনিসিয়ার ঘটনার প্রভাব পড়েছিল আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইন ও সিরিয়ায় সেই গণ-আন্দোলন ‘আরব বসন্ত’ নামে পরিচিতি পায়। রয়টার্সের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, খাদ্যপণ্যের দাম আকস্মিক বেড়ে গেলে সামাজিক পরিস্থিতি মোড় নেয় অস্থিরতার দিকে, যেমনটি ঘটেছিল ২০০৭-০৮ এবং ২০১১ সালে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী এক বছরের ব্যবধানে জানুয়ারি মাসে কৃষিপণ্যের দাম গড়ে ৩৫ শতাংশ বেশি ছিল। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে ইতিমধ্যে গম, ভুট্টা, বার্লি এবং সূর্যমুখী তেলের দাম বেড়ে গেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে দরিদ্র্য দেশগুলোতে জ্বালানি ও খাদ্য ঘাটতি আরো বেড়ে যেতে পারে। নিম্ন আয়ের দেশগুলো এমনিতেই ঋণে জর্জরিত।
গত মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক সতর্ক করেছিল, রাশিয়া-ইউক্রেনের অস্থিরতা মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় বড় ধাক্কা দিতে পারে। কারণ মিশরের মতো দেশগুলো তাদের গমের চাহিদার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে আমদানি করে। মোজাম্বিকও গম ও তেলে আমদানিনির্ভর।
অর্থনীতিবিদ রেইনহার্ট বলেন, বাণিজ্য এবং অর্থনীতিতে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে রেখে চলা মধ্য এশিয়ার দেশগুলো উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। এর মধ্যে শরণার্থীর ঢেউ পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলতে পারে