ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি দেশটির ধনী ব্যক্তিদেরও নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আনছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা মিত্রদেশগুলো। ইতিমধ্যে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে থাকা কয়েকজন ধনী ব্যক্তির সম্পদও জব্দ করা হয়েছে। ফলে ইউরোপের দেশগুলোতে থাকা সম্পদকে আর নিরাপদ মনে করছেন না তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে সম্পদ সুরক্ষায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাতকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ গন্তব্য মনে করছেন এই ধনীরা।
রয়টার্স জানিয়েছে, ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য সম্প্রতি রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি দেশটির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের সম্পদ জব্দ করার হুমকি দিয়েছে। এর পর থেকেই দেশ দুটি থেকে রাশিয়ার নাগরিকেরা তাঁদের তহবিল দুবাইয়ে স্থানান্তর শুরু করেছেন।
বিশ্বব্যাপী অন্যতম প্রশংসিত পর্যটন গন্তব্য দুবাইকে গালফ অঞ্চলের ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের কারণে সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানায় ইউএই। বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, এই অস্বীকৃতিই রাশিয়ার ধনীরা দেশটিতে তাঁদের আমন্ত্রণ হিসেবে মনে করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুবাইয়ের একটি ফার্মের একজন আইনজীবী জানিয়েছেন, রাশিয়ার একটি সংস্থা থেকে দুবাইয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ তহবিল’ স্থানান্তরের বিষয়ে কাজ করতে তাঁদের ফার্ম একটি প্রস্তাব পেয়েছে। তাঁরা কয়েক কোটি মার্কিন ডলার পাঠাতে পারেন বলে ধারণা এই আইনজীবীর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুবাইয়ের একজন জ্যেষ্ঠ ব্যাংক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ অঞ্চলের ব্যাংকগুলোতে রাশিয়ান গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে। রাশিয়ার নাগরিকদের মধ্যে যাঁদের আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকে হিসাব রয়েছে, তাঁরা একই ব্যাংকের ইউএই শাখায় কিংবা সরাসরি ইউএইর স্থানীয় ব্যাংকগুলোতে হিসাব খুলছেন। অন্য একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে এই অঞ্চলের আবাসন ব্যবসায় রাশিয়ান নাগরিকদের বিনিয়োগ বাড়ছে।
অন্যদিকে সরাসরি অর্থ স্থানান্তরের পাশাপাশি ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনও বাড়ছে দেশটিতে। আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইউএইতে বিনিয়োগের জন্য বেশ কিছু রাশিয়ান গ্রাহক সরাসরি ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করছেন। তাঁরা দেশটির আবাসন খাতে বিনিয়োগ করতে চান। এ ছাড়া অন্য অনেকে তাঁদের ভার্চ্যুয়াল অর্থকে সাধারণ মুদ্রায় রূপান্তর করতে দুবাইয়ের ফার্মগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বিশেষ করে রাজধানী দুবাই রাশিয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধাজনক স্থান। কারণ, রাশিয়া থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ফ্লাইটে সেখানে পৌঁছা যায়। পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে দেশটির নিয়ন্ত্রকদের সে রকম কোনো জবাবদিহিও নেই। এ ছাড়া দুবাইয়ে থাকা রাশিয়ান নাগরিকদের তহবিল এখনো পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসেনি। পাশাপাশি দেশটি কয়েক বছর ধরে রাশিয়ান পর্যটকদের কাছেও খুব জনপ্রিয় হয়েছে। দেশটিতে সম্পত্তিও কিনেছেন অনেক রাশিয়ান ক্রেতা।
এদিকে বিনিয়োগ সম্ভাবনা বাড়লেও দুবাইয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সুনামের ঝুঁকির আশঙ্কাও করছেন। যেখানে অনেক বিদেশি বড় প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করছে, সেখানে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ালে অনেক দেশের বিরাগভাজনও হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র: রয়টার্স।