গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। গতকাল ছিল হামলার ২০তম দিন। এদিন ওয়ারশ থেকে ট্রেনে করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে কিয়েভ সফরে যান ন্যাটো জোটের তিন সদস্যদেশের প্রধানমন্ত্রীরা। তাঁরা হলেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি, চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী পেত্র ফিয়ালা ও স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানেজ জানসা। এই তিন দেশ ইইউরও সদস্য।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এই তিন নেতার ট্রেনে করে কিয়েভে যাওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনেও একটি কারণ আছে। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, পোলিশ সামরিক বিমানে করে ইউক্রেনে গেলে তা রাশিয়া ভালোভাবে নেবে না। একে ভয়াবহ উসকানিমূলক আচরণ বলে আখ্যা দিতে পারে মস্কো।
গত সপ্তাহে ফ্রান্সের ভার্সাইতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের সময় তিন ইউরোপীয় নেতাদের ইউক্রেন সফর নিয়ে অবহিত করা হয়েছিল। পরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, তারা এ সফরের ব্যাপারে অবগত আছে, তবে এই রাজনীতিবিদেরা ইইউর সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা পূরণের জন্য যাচ্ছেন না।
পোল্যান্ডের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মারসিন সিদাচ স্বীকার করেছেন, এ সফর ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তবে ভালো কিছু হওয়ার স্বার্থে এ ঝুঁকি নেওয়া হয়েছে। মারসিন সিদাচ জানান, তিন দেশের নেতার কিয়েভ সফর নিয়ে তাঁরা রাশিয়াকে আগেই অবহিত করেছেন। বৈঠক যখন চলছিল, তখন কিয়েভে শুরু হয় কারফিউ। কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো মঙ্গলবার রাত আটটা থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত কারফিউ ঘোষণা করেছেন। শহর এক কঠিন ও ভয়াবহ সময় পার করছে বলে উল্লেখ করেন ক্লিচকো। তিনি বলেন, ‘এ জন্য আমি কিয়েভবাসীকে বলব, তারা যেন দুদিনের জন্য বাড়িতে থাকার প্রস্তুতি নেয় এবং বিমান হামলাজনিত সতর্কসংকেত বাজলে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যায়।’
কিয়েভের পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় লড়াই চলছে। মঙ্গলবার যখন তিন দেশের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছিল, তখনো শহরজুড়ে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। বিবিসি জানিয়েছে, মঙ্গলবার কিয়েভে রুশ বোমা হামলায় কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
তিন দেশের প্রধানমন্ত্রীদের সফরসঙ্গী ছিলেন পোল্যান্ডের ক্ষমতাসীন দল ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির নেতা ইয়ারোস্লভ কাচজিনস্কি। পোলিশ কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, পোল্যান্ডের সাবেক প্রয়াত প্রেসিডেন্ট লেহ কাচজিনস্কির যমজ ভাই ইয়ারোস্লভ। ২০০৮ সালে লেহ কাচজিনস্কি ঝুঁকিপূর্ণভাবে জর্জিয়া সফর করেছিলেন, তখন জর্জিয়ায় রুশ অভিযান চলছিল।
গতকাল কিয়েভে বৈঠকের সময় ইয়ারোস্লভ কাচজিনস্কি বলেন, ইউক্রেনে সামরিক সক্ষমতাসম্পন্ন একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা দল পাঠানো প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পোল্যান্ড, স্লোভেনিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রীদের ইউক্রেনের পক্ষে সরব থাকতে দেখা গেছে। মঙ্গলবার এই তিন নেতার কিয়েভ সফর নিয়ে চেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যান লিপাভস্কি বলেন, ইউক্রেনের প্রতি সংহতি জানানোর জন্য এ সফর গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের নিরাপত্তা মানে ইউরোপীয় নিরাপত্তা। ভয়াবহ রকমের বর্বর এ রুশ হামলা থেকে তাদের বাঁচাতে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করা উচিত।’