বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি (সিজেপি) উমর আতা বান্দিয়াল নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ চতুর্থ দিনের শুনানি শেষে এই রায় ঘোষণা করেছেন। প্রধান বিচারপতি বান্দিয়ালের নেতৃত্বাধীন এই বেঞ্চের সদস্য ছিলেন বিচারপতি ইজাজুল আহসান, বিচারপতি মাজহার আলম মিয়াঁখেল, বিচারপতি মুনিব আখতার এবং বিচারপতি মান্দোখেল।
প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরির আদেশ এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে প্রেসিডেন্টের জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়াকে অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা। রায়ে পাঁচ বিচারপতি সর্বসম্মতভাবে ডেপুটি স্পিকার এবং প্রেসিডেন্টের নেওয়া পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ৫-০ ভোট দিয়েছেন।
দেশটির সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, জাতীয় পরিষদকে বিলুপ্ত করে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির নেওয়া সিদ্ধান্ত অবৈধ। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাশাপাশি তার মন্ত্রিসভাকেও পুনর্বহাল করা হয়েছে রায়ে।
আগামী শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সারকে অধিবেশন পুনরায় ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। দেশটির সর্বোচ্চ এই আদালত বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের সুরাহা ছাড়া অধিবেশন মুলতবি করা যাবে না।
রায়ে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল বলেন, ‘ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি গত ৩ এপ্রিল অনাস্থা ভোট খারিজ করে একটি আদেশ দিয়েছিলেন। তার এই আদেশ অসাংবিধানিক।’
বিচারপতিরা বলেছেন, জাতায় পরিষদের অধিবেশনে কোনো আইনপ্রণেতার অংশগ্রহণে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না। আদালত আরও বলেছেন, আজকের এই আদেশ সংবিধানের ৬৩ অনুচ্ছেদের আওতাধীন কার্যক্রমকে প্রভাবিত করবে না।
এদিকে, রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, আদালত ভবনের বাইরে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে রায় ঘোষণার পর বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী ও সংসদ সদস্যদের উল্লাস করতে দেখা যায়।
এর আগে, বৃহস্পতিবার সকালের দিকে শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, গত ৩ এপ্রিল সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজে যে আদেশ দিয়েছিলেন, তা ভ্রান্ত ছিল। এটি পরিষ্কার হয়েছে।
‘আদেশে ডেপুটি স্পিকারের স্বাক্ষর ছিল না’
শুনানিতে বিচারপতি মান্দোখেলন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে গত ৩ এপ্রিল ডেপুটি স্পিকার সুরি খারিজ করে দিলেও তাতে তার কোনো স্বাক্ষর ছিল না। এতে জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সারের স্বাক্ষর ছিল।
সুরি এবং কায়সারের আইনজীবী নাঈম বুখারি যুক্তি উপস্থাপনের সময় এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। বিচারকের বক্তব্যের জবাবে বুখারি বলেন, তাকে দেওয়া নথিগুলো ভুয়াও হতে পারে।
গত ৩ এপ্রিল পাকিস্তানের সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাতীয় পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। ফলে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান রয়েছে। তার আগে ডেপুটি স্পিকারের অনাস্থা প্রস্তাব বাতিলের এখতিয়ার আদৌ আছে কি-না সেটি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে স্বতঃপ্রণোদিত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেছেন।