মূলত জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৫ শতাংশে উঠেছে - ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরের পর সর্বোচ্চ।
রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়া থেকে তেল, গ্যাসসহ সব ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানির মূল্যের রেকর্ড বৃদ্ধি হয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়রি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারকের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ঢেউ আসতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছরের মার্চ মাসে সেখানে জ্বালানির মূল্য ৩২ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানির সঙ্গে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। গম ও সূর্যমুখী তেলের মতো বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের বড় রপ্তানিকারক এই দুই দেশ—এর জেরে সারা বিশ্বেই খাদ্যমূল্য বাড়ছে।
উন্নত দেশে সাধারণত মূল্যস্ফীতির সহনীয় হার ধরা হয় ২ শতাংশ। অথচ এখন মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমিত আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছে। নর্থ ক্যারোলাইনার ক্রিস্টেন হাভলিক বলেন, মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় নিজেকে এখন তাঁর উন্মাদের মতো মনে হয়।
মহামারির প্রথম বছরে নর্থ ক্যারোলাইনায় মাসিক বাসাভাড়া ৪০০ ডলার বৃদ্ধি পায়। আয়ের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে এই বর্ধিত ভাড়া বহন করা তাঁর জন্য বেশ কষ্টসাধ্য ছিল বলে জানান ক্রিস্টেন। বলেন, ‘গত বছর আমি ও আমার স্বামী দুজনেই ভালো বেতনে চাকরি করার সুয়োগ পেয়েছিলাম। যদি তা না পেতাম, তবে আমাদের নর্থ ক্যারোলাইনা ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে থাকতে হতো। আমরা দুজনে কাজ করলেও এখন পর্যন্ত তেমন একটা অর্থ জমাতে পারিনি।’
গত বছর করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে আসতে শুরু করলে পশ্চিমা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে। এরপর রাশিয়া–ইউক্রেন তাতে নতুন মাত্রা যোগ করে। যুক্তরাষ্ট্রের এই ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ধারায় লাগাম পরাতে গত মাসে তিন বছরের মধ্যে এই প্রথম দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদের হার বাড়ায়। আর এ বছরের মধ্যে নীতি সুদহার আরও কয়েক বার বাড়ানো হবে বলে ইঙ্গিত দেয় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে নীতি সুদহার এত সামান্য পরিমাণে বৃদ্ধি করলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না বলে মনে করেন ফেডের কর্মকর্তারা। ফেডের সেন্ট লুইস শাখার প্রেসিডেন্ট জেমস বুলার্ড ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, নীতি সুদহার এমন পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে, যাতে প্রবৃদ্ধির ধারায় প্রকৃত অর্থেই প্রভাব পড়ে। তবে সে ক্ষেত্রে মন্দার শঙ্কা আছে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকেরা। সে জন্য বুলার্ডের অভিমত, নীতি সুদহার ২ দশমিক ৪ শতাংশ হলে অর্থনীতির সংকোচন বা প্রসারণ কোনোটাই হবে না।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি তাদের রাজনীতিবিদদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। তবে তাতে পশ্চিমা নেতারা রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেবেন, সেই সম্ভাবনা সুদূরপরাহত বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা।