পাশাপাশি সৌদি এক্সচেঞ্জের এমটি৩০ সূচকটির পতন হয়েছে ৪২ পয়েন্ট, প্যারালেল মার্কেট ক্যাপড ইনডেক্স (এনওএমইউসি) ৩৭৯ পয়েন্ট কমে ২২ হাজার ৪৫২ পয়েন্টে দাড়িয়েছে।
এদিন সৌদির শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৮১টি বন্ড ও সুকুকের অধিকাংশের ব্যাপক পতনে লেনদেন চলছে।
সৌদি এক্সচেঞ্জের মূল মার্কেটে ২১৫টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ১৯১টি কোম্পানির ব্যাপক দরপতন চলছে, অপরদিকে দর বেড়েছে মাত্র ১৯টি কোম্পানির। এদিন মূল মার্কেটের সূচক পড়েছে ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
আর্থিক বাজারের তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রিফিনিটিভ অনুসারে, সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি সৌদি আরামকোর বাজারমূল্য বেড়ে ২ লাখ ৪২ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। অন্যদিকে অ্যাপলের বাজারমূল্য কমে ২ লাখ ৩৭ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। যদিও বাজারমূল্য প্রায়ই ওঠানামা করে। এরই অংশ হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে দামি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বৃহত্তম জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী। সৌদি আরামকো এর আগে ২০১৯ সালেও একবার বাজারমূল্যের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে জায়গা করে নিয়েছিল। সেসময় সংস্থাটির বাজারমূল্য ২ লাখ কোটি ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে বিনিয়োগকারীরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তারা এ সম্পর্কিত শেয়ারগুলো বিক্রি করে দ্রুত বর্ধনশীল খাতে বিনিয়োগ করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিটকয়েন ও অন্যান্য প্রধান ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ডিজিটাল সম্পদগুলোর বাজারমূল্য উলম্বভাবে পতন অব্যাহত রয়েছে। বুধবার নিউইয়র্ক পুঁজিবাজারে অ্যাপলের শেয়ারদর ৫ শতাংশেরও বেশি কমেছে। লেনদেন শেষে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির বাজারমূল্য ২ লাখ ৩৭ হাজার কোটি ডলারে নেমে আসে। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সংস্থাটির শেয়ারদর কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ।
এমনকি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়ার পরও সংস্থাটির শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী হয়নি। প্রবল ভোক্তা চাহিদায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে শক্তিশালী মুনাফা পেয়েছে সংস্থাটি। তবে অ্যাপল সতর্ক করেছে, চীনে কভিডজনিত লকডাউন ও চলমান সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এতে বেড়ে গেছে সৌদি আরামকোর শেয়ারদরও। চলতি বছর সংস্থাটির শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। সবমিলিয়ে দুই বছর পর পুনরায় শীর্ষস্থান ফিরে পেয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে মহামারীর বিপর্যয় কাটিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের এ সময়ে জ্বালানির চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। আবার ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন জ্বালানি বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে তুলেছে। ফলে বেড়ে গেছে দামও। এ কারণে গত বছর আরামকোর মুনাফা ১২৪ শতাংশ বেড়ে ১১ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছিল। যেখানে ২০২০ সালে সংস্থাটির মুনাফার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার।
অপরদিকে বুধবার (১৮ মে) নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের ডাওজোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচক ১ হাজার ১৬৪ পয়েন্ট কমেছে। অন্যদিকে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ। সূচক দুটি ২০২০ সালের জুন মাসের পর একদিনে এতটা কমেনি কখনো।
এদিন নাসডাক স্টক এক্সচেঞ্জের প্রযুক্তি কোম্পানির সূচক নাসডাক ১০০ কমেছে ৫ দশমিক ১০ শতাংশ। অন্যদিকে এমএসসিআই গ্লোবাল ইনডেক্স কমেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী সুদের হার বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতিতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমে যাওয়ার ঝুঁকি, বিশ্ব জুড়ে মন্দার আশংকা, শ্রীলংকার পর রাশিয়ার বন্ডের অর্থ ফেরতে খেলাপী হয়ে পড়ার আশংকা-সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় এই দর পতন হয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।