‘বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্ভাবনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলে, করোনা মহামারির কারণে এমনিতেই বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে মন্থরতা চলছে। এ রকম অবস্থায় ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্থরতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন দুর্বল প্রবৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ। অনেক দেশ মন্দার সম্মুখীন হয়েছে। এ পরিস্থিতি আরও খারাপ ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ২০২১ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। গত জানুয়ারি মাসে বিশ্বব্যাংক ২০২২ সালের জন্য ৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় এখন সেই পূর্বাভাস কমিয়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ করেছে সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে চলতি ২০২২ সালে প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে, যা ২০২১ সালে ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। ইউরো জোনে প্রবৃদ্ধি গত বছরের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে ২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে। চীনের অর্থনীতিতেও ২০২১ সালের তুলনায় এবারে প্রবৃদ্ধি কম হবে।
গত বছর চীনে যেখানে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ১ শতাংশ সেখানে এবারে তা মাত্র ৪ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে। তবে বিশ্বব্যাংক সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদ শুনিয়েছে যুদ্ধরত দুই দেশ ইউক্রেন ও রাশিয়াকে। সংস্থাটি চলতি বছরে ইউক্রেনের অর্থনীতি ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ ও রাশিয়ার অর্থনীতি ৮ দশমিক ৯ শতাংশ হারে সংকুচিত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেন, অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি এ বছরের চেয়েও কমে গিয়ে দেড় শতাংশে নেমে যেতে পারে। যদি পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, তাহলে মাথাপিছু প্রবৃদ্ধি শূন্যের কাছাকাছিও চলে যেতে পারে।
ম্যালপাস আরও বলেন, ইউক্রন–রাশিয়া যুদ্ধ, করোনার কারণে চীনে আবার কঠোর বিধিনিষেধ জারি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়া এবং দেশে দেশে ঝুঁকি বাড়ছে। যে কারণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি দুর্বল প্রবৃদ্ধি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি ১৯৭০–এর দশকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল।
ঝুঁকি কমানোর জন্য বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর নীতিনির্ধারকদের ইউক্রেনের জন্য সাহায্য সমন্বয় করতে, খাদ্য ও জ্বালানির উৎপাদন বাড়াতে এবং রপ্তানি ও আমদানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন ম্যালপাস। তা না করা গেলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি, ভোজ্যতেল ও খাদ্যের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। সূত্র: রয়টার্স