বুধবার সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের ৭৪৯ জন স্থানীয় করোনা আক্রান্তের ওপর গবেষণা চালিয়ে এমন সিদ্ধান্তে এসেছেন গবেষকরা। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে ওই ৭৪৯ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
গবেষকরা দেখেছেন, আবহাওয়ার সঙ্গে করোনা সংক্রমণের সম্পৃক্ততা রয়েছে। আর্দ্রতা এক শতাংশ কমে গেলে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার ৬ শতাংশ বেড়ে যায়।
পিয়ার-রিভ্যুড গবেষণাটিতে নেতৃত্ব দেওয়া জুনোটিক রোগ বিশেষজ্ঞ ও সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল ওয়ার্ড বলেন, কম আর্দ্রতায় নতুন করোনাভাইরাস বেশিক্ষণ বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। ফলে এর সংক্রমণের ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। আর উচ্চ আর্দ্রতায় ভাইরাসটি দ্রুত মাটিতে পড়ে যায়।
নতুন করোনার সংক্রমণের সঙ্গে আবহাওয়ার সম্পর্ক নিয়ে প্রথম দফায় চীনের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজি অ্যান্ড হেলথ স্ট্যাটিস্টিক্স বিভাগের সঙ্গে গবেষণা করেছিলেন অধ্যাপক মাইকেল। উত্তর গোলার্ধের দেশ চীনে শীতকালে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়ে) ভাইরাসটির আচরণ কেমন ছিল তা জানতেই সে গবেষণা করেন তিনি।
গত এপ্রিলে সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়োরেনমেন্ট জার্নালে অধ্যাপক মাইকেলের চীনে করা গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘কম আর্দ্রতা ও কম তাপমাত্রায় নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা বাড়ে।’
তবে অস্ট্রেলিয়ায় করা গবেষণায় অধ্যাপক মাইকেল ও তার দল দেখতে পান, কম তাপমাত্রায় নয়, শুধু কম আর্দ্রতাতেই ভাইরাসটির সংক্রমণ ক্ষমতা বাড়ে। এ ছাড়া মার্স ও সার্স করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গেও কম আর্দ্রতার সম্পর্ক রয়েছে। তবে তাপমাত্রার সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সামঞ্জস্যতা সবসময় এক রকম ছিল না।
অধ্যাপক মাইকেল বলেন, উত্তর গোলার্ধের শীতকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধের গ্রীষ্মকালে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তারের সঙ্গে জলবায়ুর বিষয়টি নিশ্চিতভাবে সম্পৃক্ত। স্পষ্ট করলে বললে, আর্দ্রতা, বিশেষ করে নিম্ন মাত্রার আর্দ্রতা ভাইরাসটির সংক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখে। অন্যদিকে তাপমাত্রার প্রভাব স্থান অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।
গত মে মাসে অধ্যাপক মাইকেল নেতৃত্বাধীন দলের গবেষণাটি ট্রান্সবাউন্ডারি অ্যান্ড এমারজিং ডিজিসেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। দক্ষিণ গোলার্ধে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সঙ্গে জলবায়ু বা আবহাওয়ার সম্পর্ক নিয়ে প্রথম পিয়ার-রিভ্যুড গবেষণা এটি।
দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশ, এশিয়ার কয়েকটি দ্বীপ দেশ এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের আশপাশের দ্বীপ দেশগুলো দক্ষিণ গোলার্ধের অন্তর্ভূক্ত। উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোর তুলনায় এই দেশগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার তুলনামূলক কম।