ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিস স্যাটেলাইট ছবির বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস’র এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানা গেছে।
১৫ জুন অন্তত ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত ও ৭৬ জন আহত হয়েছে। লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় হিমালয়ের ১৪ হাজার মিটার উঁচুতে চীনা সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর মতে, চীনেরও ৪৩ সেনা নিহত হয়েছে। তবে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে তা নিশ্চিত না করায় চীনা হতাহতের বিষয়টি অস্পষ্ট রয়ে গেছে। পৃথকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ৩৫ চীনা সেনা নিহতের কথা বলা হয়েছে। চীন আরও দশ ভারতীয় সেনাকে আটকের ১৮ জুন মুক্তি দিয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার রাতের ওই সংঘর্ষে উভয় দেশের প্রায় ৬০০ জন জড়ায়। হাতাহাতির এই লড়াই চলে প্রায় ছয় ঘণ্টা। কোনও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। উভয় পক্ষই লোহার রড, পাথর ও কাঁটাতার জড়ানো লাঠিকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, চীনা সেনারা তাদের ব্যাটনে কাঁটাতার জড়িয়ে নেয় অথবা সেগুলোতে পেরেক সাঁটে, যাতে কার্যকারিতা বাড়ে।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিস-এর গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে, ওই সংঘাতের পরই সীমান্তে উভয় দেশই নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে।
প্লানেট ল্যাবস প্রদত্ত স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ভারতীয় ভূখণ্ডে ৩০-৪০ টি সামরিক যান অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে অবস্থান নিয়েছে। আর চীনা অংশে প্রায় ১০০টি অতিরিক্ত ট্রাক অবস্থান নিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির অনুমান অনুসারে, সীমান্তের ওই অংশে উপস্থিত চীনা সেনাদের সংখ্যা এক থেকে দেড় হাজার হতে পারে। সাধারণত ৫০০-৬০০ সেনা মোতায়েন থাকে। এছাড়া অন্যান্য সামরিক ইউনিট বিশেষ করে মেকানাইজড ডিভিশনকেও ডাকা হয়েছে। অবশ্য সীমান্তের কাছে যেসব চীনা তাঁবু সংঘাতে উসকানি হিসেবে কাজ করেছিল সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এক বিবৃতিতে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিস জানায়, সংশ্লিষ্ট ডি ফ্যাক্টো সীমান্তে উভয় পক্ষই যে তাৎপর্যপূর্ণ পরিমাণে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে ছবিগুলো সেটির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ।
যুক্তরাজ্যের মিডলবারি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জেফরি লুইস মনে করেন, চীনা সেনারা ওই এলাকায় একটি নতুন সড়ক বানাচ্ছে এবং সম্ভবত একটি নদীতে বাঁধ দিতে যাচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত দেশটির তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে করছেন এবং এই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন। মালাক্কা প্রণালীর কাছাকাছি জাহাজ মোতায়েনে নৌবাহিনীকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চীনের পদক্ষেপ মোকাবিলায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের যে কোনও মোতায়েনেরও অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
খবরে আরও বলা হয়েছে, সংঘর্ষ স্থলের দিকে আরও কাছাকাছি স্থানে যুদ্ধবিমান মোতায়েন ইঙ্গিত দেয় ভারত ও চীন হয়ত আরও সহিংস সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
উভয় দেশের ডি ফ্যাক্টো সীমান্ত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) অতিক্রমে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে চীন ও ভারত। সীমান্ত এলাকায় নিয়ে উভয় দেশের সীমান্ত বিরোধ দীর্ঘ দিনের। আকসাই চীন এলাকাকে জিনজিয়াং প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করে আসছে বেইজিং। ১৯৬২ সালে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকা নিয়ে উভয় দেশ ভয়াবহ যুদ্ধে জড়ায়। এতে মৃত্যু হয়েছিল ২ হাজার জনের।