চলতি বছরের জন্য এইচওয়ানবিসহ এসব ভিসা স্থগিত করে সোমবার রাতে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে ভিসার ক্ষেত্রে লটারি নয়, মেধাভিত্তিক অভিবাসনের দিকেই প্রশাসনকে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি, এমনটাই জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। তবে যারা এরই মধ্যে এসব ভিসাধারী তাদের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না।
এ আদেশের ফলে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন প্রযুক্তিবিদ, মৌসুমী অকৃষিজ কর্মী ও শীর্ষ নির্বাহীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে এমন আদেশে ক্ষোভ জানিয়েছে দেশটির প্রযুক্তি রাজধানী সিলিকন ভ্যালি।
হোয়াইট হাউস বলছে, এই পদক্ষেপ মহামারিজনিত কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ আমেরিকানদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। তবে সমালোচকরা বলছেন, হোয়াইট হাউস অভিবাসন আইন কঠোর করার জন্য করোনভাইরাস মহামারিকে ব্যবহার করছে। খবর বিবিসি ও সিএনএনের।
বিদেশি কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব ভিসায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোপ বসিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে- এইচ-১বি (বিশেষ পেশায় দক্ষ ও শিক্ষিত), এইচ-২বি ভিসা (সেবাখাত ও মৌসুমি কাজ), এল-১ ভিসা (কোম্পানিতে আন্তঃবদলি) এবং জে-১ ভিসা (ছাত্র-গবেষক ও চিকিৎসকদের সাময়িকভাবে দেওয়া হয়)।
হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনিক ডিক্রি-বলে বিদেশিদের ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় রাশ টানতে সাময়িক স্থগিতাদেশ বলবৎ করেছেন। চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আর কোনো ওয়ার্ক ভিসা দেওয়া হবে না।'
হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, 'এসব ভিসা স্থগিত করায় আমেরিকানদের অন্তত ৫ লাখ ২৫ হাজার কর্মহীন মানুষের কাজের নতুন সুযোগ তৈরি হবে। তাছাড়া প্রেসিডেন্টের এ সিদ্ধান্তে মজুরি ও দক্ষতা স্তর উভয়ই বাড়িয়ে দেবে। একই সঙ্গে এন্ট্রি লেভেল জবের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সঙ্গে চাকরির জন্য প্রতিযোগিতার বিষয়টিকেও দূর করবে।'
করোনা সংক্রমণের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন প্রদেশে লকডাউন জারি করে প্রশাসন। এতে দেশটিতে গত মে মাস পর্যন্ত বেকারত্বের শিকার হয়েছেন ৩ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ। এই বেকারত্বের কারণেই নিজ দেশের নাগরিকদের সুযোগ দিতে বিদেশি কর্মীর ভিসা নীতিতে কড়াকড়ির ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন দপ্তরের পরিসংখ্যান মতে, ২০১৯ সালে এইচ-১বি ভিসার অনুমোদন পেয়েছিলেন প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজার কর্মী। এল-১ ভিসার সাহায্যে ১২ হাজারেরও বেশি অস্থায়ী কর্মী যুক্তরাষ্ট্রে যান। আর ৯৮ হাজার কর্মীকে এইচ-২বি ভিসা দেওয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে ট্রাম্পের নতুন ঘোষণার প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার বিদেশি কর্মীর ভিসা স্থগিত হলো। আগামী ২৪ জুন থেকে নতুন আদেশ কার্যকর হবে।
মূলত এইচ-১ বি ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে বেশি যান ভারত ও চীনের আইটিখাতের কর্মীরা। নতুন সিদ্ধান্তে ভারত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। তাছাড়া ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আইটি হাব সিলিকন ভ্যালির কর্মকর্তারা।
জায়ান্ট সার্চ ইঞ্জিন গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই এক টুইটার বার্তায় বলেন, 'দক্ষ অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে অনন্য অবদান রেখে চলেছেন। বিশেষ করে দেশটিকে প্রযুক্তিখাতে বিশ্বের নেতা বানিয়েছে অভিবাসীরাই, গুগলও এতো বড় হয়েছে তাদের কারণে।'
তিনি আরও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের নতুন ঘোষণা হতাশ করেছে। আমরা অভিবাসীদের পক্ষে কাজ করে যাবো এবং সবার জন্য কাজের সুযোগ রাখতে সচেষ্ট থাকবো।'
টুইটারের পাবলিক পলিসি বিষয়ক প্রধান জেসিকা হেরেরা-ফ্লানিগান বলেন, 'এই নীতিটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ক্ষতি করবে। একতরফা ও অপ্রয়োজনীয় এ নীতি বিশ্বব্যাপী উচ্চ-দক্ষতাসম্পন্ন প্রতিভাবানদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বাধাগ্রস্ত করবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক শক্তির জন্য অতি ক্ষতিকর।'