পুষ্টিবিদদের পরামর্শে এই পিঠার রেসিপি তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করছেন সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা যশোর সরকারি এমএম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন। তিনি বলেন, ‘গোটাবিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারি রূপ নিয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, এর কোনও ওষুধ বা ভ্যাকসিন নেই। কাজেই ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। এ কারণেই আইডিয়ার কর্মীরা পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এই পিঠা তৈরি করেছে। ইমিউনিটি পিঠার উপাদানসমূহের মধ্যে রয়েছে−ডুমুর, কালোজিরা, আদা, রসুন, এলাচ, মেথি, লবঙ্গ, গোলমরিচ, দারুচিনি, আমলকী, তুলসিপাতা, সজনে পাতা ও এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল। যার সবই আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বহুবিধ উপকার সাধন করে।’
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পুষ্টি ও খাদ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রভাষক শুভাশীষ দাস শুভ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘প্রাচীনকাল থেকেই প্রমাণিত যে নিয়মিত শরীর চর্চা ও সাধারণ সুষম খাবারের পাশাপাশি কিছু মশলা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন কালোজিরা, আদা, রসুন, হলুদ, লবঙ্গ, গোলমরিচ। এছাড়া ডুমুর, আমলকী, তুলসিপাতা ও সজনের পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আইডিয়া পিঠা পার্ক উদ্ভাবিত ইমিউনিটি পিঠা এই জায়গাতেই কাজ করেছে।’
যশোর ল্যাব এইড’র নিউট্রিশন ও ডায়েট কনসালটেন্ট পুষ্টিবিদ মো. শাহারিয়া করিম জসি বলেন, ‘কোভিড-১৯ এ সবচেয়ে বেশি সমস্যা শ্বাসকষ্টে। কালোজিরা শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা কমায়। ক্ষতিকর জীবাণু নিধন থেকে শুরু করে শরীরের কোষ ও কলার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দৈনিক ৫ গ্রাম মেথি, ১-১.৫ গ্রাম দারুচিনি, ২-৫ গ্রাম কাঁচা রসুন, ২-৩ গ্রাম আদা খাওয়া উচিত। এসব মশলায় রয়েছে বিভিন্ন প্রকার antioxidants যেমন; কালোজিরায় আছে Phenolic amides, Flavonoids, আদায় আছে Gingerol, লবঙ্গে রয়েছে Eugenol, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি এসব উপাদান সামগ্রিকভাবে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ তথা Lifestyle Disease নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আইডিয়া পিঠা পার্ক কর্তৃক উদ্ভাবিত, আয়ুর্বেদিক উপাদান ও বিভিন্ন মশলার সমন্বয়ে সাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি এই পিঠা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষকে বিভিন্ন প্রকার রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে সহায়ক হবে।’
আইডিয়া পিঠা পার্কের সমন্বয়ক সোমা খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘গত সপ্তাহ থেকে আমরা এই পিঠা বাজারজাত করছি। মূলত আমাদের ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে করে শুধু যশোরই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও আমরা সাড়া পাচ্ছি প্রতিনিয়ত। চাহিদা ও সরবরাহ সন্তোষজনক। আমরা বিশ্বাস করি, আইডিয়া ইমিউনিটি পিঠা খাদ্য হিসেবে গ্রহণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অনেক বৃদ্ধি পাবে। যা করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় সহায়ক হবে।’
আইডিয়া পিঠা পার্কের পেজে (https://www.facebook.com/ideapithapark/) এ সম্পর্কে আরও জানা যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, ‘শুধু পিঠা নয়; আইডিয়া বিভিন্ন সামাজিক কর্মতৎপরতা নিয়ে মানুষের পাশে রয়েছে। করোনার শুরুতে মাসজুড়ে ৩৯২টি পরিবারের খাবারসহ সবধরনের সহযোগিতা করেছে। এছাড়া প্রতিবছর ঈদে শিশুদের বস্ত্র প্রদান, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শীতার্তদের শীতবস্ত্র প্রদান গৃহহীনদের গৃহনির্মাণ, বাড়িতে বাড়িতে গাছ লাগানোসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড করে থাকে।’
এ বিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, ‘শুধু পিঠা কেন, যেকোনও খাদ্যদ্রব্যে যদি এসব উপাদান থাকে তবে তা উপকারী, যদি তা প্রাকৃতিক উৎস থেকে আসে। এসব উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, তারা করোনাও প্রতিরোধে বেশি সক্ষম হবেন।’