ভারতীয় ধনকুবের কুমার মঙ্গলম বিড়লার আদিত্য বিড়লা গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিন্দালকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। অ্যালুমিনিয়াম ও কপার উৎপাদনকারী কোম্পানিটি তাদের বৈশ্বিক মূলধনি ব্যয় ৪০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা করছে। একই পথে হাঁটছে ভারতের বৃহত্তম ইস্পাত নির্মাতা টাটা স্টিল লিমিটেডও। তারা তাদের মূলধনি ব্যয় গত বছরের অর্ধেকে নামিয়ে আনবে।
হিন্দালকো ও টাটা স্টিলের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে আরো কয়েকটি সিমেন্ট ও গাড়ি নির্মাণকারী কোম্পানি। বিষয়টি এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির জন্য বেশ উদ্বেগের। কারণ ভারতের জিডিপির প্রায় এক-চতুর্থাংশের উৎস হলো সরকারি-বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মূলধনি ব্যয়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আশঙ্কা, চলতি বছর ৪ দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে ভারতের অর্থনীতি। দেশটির ইতিহাসে ১৯৮০ সালের পর এটিই হবে প্রথম সংকোচন। এ অবস্থায় শীর্ষ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলো তাদের মূলধনি ব্যয় কমালে তা দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এবং জিডিপিতে দীর্ঘমেয়াদি চাপ তৈরি করতে পারে। এমনটি হলে করোনা-উত্তর সময়ে জিডিপিতে ৭-৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরতে ভারতকে বেশ বেগ পেতে হবে।
কভিড-১৯ মহামারীর কারণে চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থায় ধস নেমেছে। একই সঙ্গে কমেছে ভোক্তাব্যয়, যা ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড। আর ভোক্তাব্যয় কমে যাওয়ায় কোম্পানিগুলোর আয় ও মুনাফাও কমেছে। এ কারণেই তারা এখন বিনিয়োগ বা সক্ষমতা না বাড়িয়ে নগদ অর্থ হাতে রাখতে চাইছে, যেন ভবিষ্যতে সংকট আরো বাড়লে এ অর্থ কাজে লাগে।
মুম্বাইয়ে ডয়েচে ব্যাংকের ভারতীয় অর্থনীতিবিষয়ক প্রধান হিসেবে কর্মরত কৌশিক দাস বলেছেন, ‘ভারতের প্রবৃদ্ধির পথে সবচেয়ে বড় বাধা আসবে বিনিয়োগ খাত থেকে। প্রলম্বিত লকডাউনের কারণে অনেক ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে অপ্রচলিত খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। আর প্রচলিত খাতের কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমে যাবে। একই সঙ্গে তাদের বিনিয়োগও।’
কৌশিক দাস মনে করছেন, মহামারী পরিস্থিতি যে কেবল বর্তমানেই বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তা নয়। বরং আগামী কয়েক অর্থবছরেও এ প্রভাব দেখা যেতে পারে।
ভারতে ফিচ রেটিংসের স্থানীয় সহযোগী হিসেবে কাজ করে ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চ। প্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষকরা বলছেন, ১ এপ্রিল শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরে ভারতে কোম্পানিগুলোর মূলধনি ব্যয় পরিকল্পনা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০ থেকে ২৬ শতাংশ কমে যেতে পারে। তাদের মতে, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক চাহিদায় ব্যাপক উত্তরণ না ঘটলে এবং বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন না এলে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কার্যক্রমে কোনো অর্থবহ পুনরুদ্ধার দেখা যাবে না।
অবশ্য ভারতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে মন্দা ভাব চলছে মহামারীর আগে থেকেই। ২০০৭-০৮ সালের বৈশ্বিক মন্দার পর ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ব্যাপক হারে ঋণনির্ভর হয়ে পড়েছিল ভারতীয় কোম্পানিগুলো। সেই ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তারা মূলধনি বিনিয়োগ কমিয়েছে। এখন করোনাকালের অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে কোম্পানিগুলো সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সংকট নিয়ে আগাম সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করায় ভারতের জিডিপি আরো চাপে পড়ে যাবে।
সুত্র: ব্লুমবার্গ