বুধবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘পুরান ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের অবদান বজায় রাখার লক্ষ্যে চলমান পরিস্থিতিতে সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের জন্য করণীয় নির্ধারণে এলাকাভিত্তিক ও বিশেষায়িত ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এমন অভিমত প্রকাশ করেন উদ্যোক্তারা। ওয়েবিনারে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হোসেন খালেদ সম্মানিত অতিথি হিসেবে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ পোশাক প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি আলহাজ মো. আলাউদ্দিন মালিক, ঢাকা শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি হোসেন এ সিকদার, বাংলাদেশ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ ব্রেড, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন এবং বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. গোলাম মওলা অংশগ্রহণ করেন।
ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআইয়ের সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা রয়েছেন প্রায় ১৩ মিলিয়ন। জিডিপিতে যাদের অবদান ২৫ শতাংশ। মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ লোক জড়িত এ খাতে। আর বাংলাদেশের মোট রফতানিতে এসএমই উদ্যোক্তাদের অবদান ৭৫-৮০ শতাংশ। কিন্তু কভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সরকারের ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজ হতে এ খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণসহায়তা প্রদানে ব্যাংকগুলোও তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এর কারণ আমাদের দেশে বেশির ভাগ এসএমই উদ্যোক্তাই ব্যাংক সেবার সঙ্গে তেমনভাবে সম্পৃক্ত নয়।
ডিসিসিআইয়ের সভাপতির মতে, এ খাতের উদ্যোক্তাদের সব সময়ই ঋণের অপ্রতুলতা, বাজারের অভিগম্যতার অভাব, পণ্যের গুণগতমান বৃদ্ধি না করা, প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের অভাব এবং সর্বোপরি দক্ষ জনশক্তির অভাব প্রভৃতি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এজন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের সার্বিক সহায়তা প্রদানে ব্যাংক ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে হোসেন খালেদ বলেন, দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অনেকাংশেই এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ওপর নির্ভরশীল। তাই এসএমই উদ্যোক্তাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি চলমান রাখা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা। এ খাতের উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড চালিয়ে রাখতে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করতে হবে।
হোসেন খালেদ প্রণোদনার প্যাকেজ হতে ঋণসহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে এসএমই উদ্যোক্তাদের মধ্যে যাদের এখনো ব্যাংক হিসাব নেই, সেসব উদ্যোক্তাকে ব্যাংক হিসাব খোলাসহ ব্যাংকিং কার্যক্রমে নিজেদের আরো বেশি হারে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি স্থানীয় পর্যায়ের এসএমই উদ্যোক্তাদের নগদ সহায়তা প্রদানে সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব করেন।
হোসেন খালেদ আরো বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণসহায়তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃতহবিলের আওতায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ হারে ঋণ সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধা প্রদানে আরো উদ্যোগী হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ পোশাক প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সহসভাপতি আলহাজ মো. আলাউদ্দিন মালিক বলেন, পহেলা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতর সময়ে লকডাউন থাকার কারণে বন্ধ ছিল। ফলে এ খাতের উদ্যোক্তারা উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারেননি, যার কারণে এ খাতের উদ্যোক্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ খাতের সঙ্গে ডায়িং, এমব্রয়ডারিসহ অন্যান্য খাতের উদ্যোক্তা জড়িত রয়েছেন উল্লেখ করে তাদেরকে প্রণোদনা প্যাকেজ হতে আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতকরণের আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি ও ডিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি হোসেন এ সিকদার বলেন, কেরানীগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীতে প্রায় ১২০টি শিল্প রয়েছে, তবে কভিড-১৯-এর কারণে স্থানীয় বাজারের চাহিদা কমে যাওয়ায় উৎপাদন ও বিক্রি কমে যাওয়ায় উদ্যোক্তারা ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন এবং শ্রমিকদের বেতন দেয়া যাচ্ছে না। এছাড়া দেশের ৭৬টি বিসিক শিল্পনগরীতে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ ও বিল অগ্রিম (প্রিপেইড মিটার সংযোগ) পরিশোধ করতে গিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কভিড-১৯ মহামারীর কারণে এ খাতের উদ্যোক্তারা এরই মধ্যে উৎপাদিত পণ্য ও সেবা এখন বিক্রি করতে পারছেন না । অন্যদিকে প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও এ বিষয়ক নির্দেশনা এখনো স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা অবগত না হওয়ায় এ প্যাকেজ হতে উদ্যোক্তারা ঋণসহায়তা পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় উদ্যোক্তাদের অন্তত এক বছরের জন্য ভ্যাট এবং বিদ্যুৎ বিল মওকুফের প্রস্তাব করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ডিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মোহাম্মদ বাশিরউদ্দিন, সাবেক ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি ও পরিচালক ওয়াকার আহমদ চৌধুরী, পরিচালক আলহাজ দ্বীন মোহাম্মদ, মো. শাহিদ হোসেন, মনোয়ার হোসেন, সাবেক সহসভাপতি এম আবু হোরায়রাহ, ইমরান আহমেদ, খন্দ. শহীদুল ইসলাম, রিয়াদ হোসেন, বাংলাদেশ হস্তশিল্প সমবায় ফেডারেশনের সভাপতি জেরিনা সাইদ এবং আহ্বায়ক মোহাম্মদ জমশের আলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।