ইইপিসি-ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের রফতানি পণ্যের তালিকায় প্রকৌশল পণ্য ক্যাটাগরিতে লোহা ও ইস্পাতজাত পণ্যসহ মোট ৩৩টি নাম রয়েছে। চলতি বছরের জুনে এর মধ্যে ২৭টি পণ্যের রফতানি আগের তুলনায় কমে এসেছে। সব মিলিয়ে গত জুনে ভারত থেকে প্রকৌশল পণ্য রফতানি আগের বছরের জুনের তুলনায় কমেছে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। তবে একই সময়ে বাকি ছয়টি পণ্যের মধ্যে দেশটি থেকে লোহা ও ইস্পাতজাত পণ্য রফতানি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।
চলতি বছরের জুনে ভারত থেকে সব মিলিয়ে ১৩২ কোটি ডলার সমমূল্যের লোহা ও ইস্পাতজাত পণ্য রফতানি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইইপিসি-ইন্ডিয়া। ২০১৯ সালের জুনে দেশটি থেকে ৬৫ কোটি ৩৫ লাখ ২০ হাজার ডলার সমমূল্যের লোহা ও ইস্পাতজাত প্রকৌশল পণ্য রফতানি হয়েছিল। গত জুনে ভারত থেকে অনুজ্জ্বল ধাতু রফতানিও ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী ও টানা লকডাউন ভারতের প্রকৌশল পণ্য রফতানি পতনের পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। ইইপিসি-ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, লোহা ও ইস্পাতজাত পণ্য রফতানি বাড়লেও গত এপ্রিলে সামগ্রিক প্রকৌশল পণ্য রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৪ শতাংশ কমেছে। মে ও জুনে রফতানি কমার পরিমাণ যথাক্রমে ২৪ ও ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ।
ভারত থেকে লোহা ও ইস্পাতজাত পণ্য সবচেয়ে বেশি আমদানি করে চীন, ভিয়েতনাম ও তাইওয়ান। ইইপিসি-ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুনে চীনের বাজারে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার সমমূল্যের লোহা ও ইস্পাতজাত পণ্য রফতানি করেছিলেন ভারতীয় রফতানিকারকরা। গত জুনে ভারত থেকে চীনের বাজারে লোহা ও ইস্পাতজাত পণ্য রফতানি করে ভারতীয় রফতানিকারকরা ৫২ কোটি ৪০ লাখ ডলার আয় করেছেন।
অন্যদিকে একই সময়ে ভিয়েতনামের বাজারে ভারত থেকে চলতি বছরের জুনে ১৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার মূল্যমানের লোহা ও ইস্পাতজাত পণ্য রফতানি হয়েছে। তাইওয়ানে রফতানি হয়েছে ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার মূল্যমানের লোহা ও ইস্পাতজাত পণ্য।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ এড়াতে গত ২৫ মার্চ ভারতে টানা লকডাউন শুরু হয়। বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা-বাণিজ্য, অবকাঠোমো নির্মাণকাজ। সাধারণ মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়ায় ওই সময় বিভিন্ন খাতে তীব্র শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। বিঘ্নিত হয় রফতানি কার্যক্রম। অবকাঠামো নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় প্রকৌশল পণ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদাও কমে আসে। সব মিলিয়ে গভীর সংকটে পড়ে রফতানিমুখী এ খাত। তবে ব্যতিক্রম দেখা গেছে লোহা ও ইস্পাতজাত পণ্যের ক্ষেত্রে। লকডাউনে উৎপাদন ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমলেও সংশ্লিষ্টরা মজুদ কমিয়ে এনে রফতানি বাড়াতে মনোযোগ দেন। এর জের ধরে ক্যাটাগরির ৩৩টি পণ্যের মধ্যে বেশির ভাগের মন্দা ভাব বজায় থাকলেও গত জুনে ভারত থেকে লোহা ও ইস্পাতজাত পণ্যের রফতানিতে বড় উল্লম্ফন দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ইইপিসি-ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান মহেশ দেশাই বলেন, করোনাকালে ভারতের প্রকৌশল পণ্য রফতানি খাত ভীষণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তুলনামূলক দামি পণ্যগুলোর রফতানিতে বিরাট পতন দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে তুলনামূলক কম দামি পণ্যের রফতানি রয়েছে বাড়তির দিকে। এ সংকট থেকে উত্তোরণে স্বল্পমেয়াদে সরকারি সহায়তার বিকল্প নেই। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে আগামী দিনগুলোয় ভালো অবস্থানে ফিরতে খাতটিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। খুঁজতে হবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ।
সুত্র: রয়টার্স ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।