খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ছয় বছরে কোন সিনিয়রিটি লিস্ট বা জ্যেষ্ঠতা তালিকা প্রকাশ করেনি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। কিন্তু আইন অনুযায়ী প্রতি ৩ বছর পরপর এই তালিকা প্রকাশ করে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতে হবে। ২০১৪ সালের পরে কোন সিনিয়রিটি লিস্ট প্রকাশ না হলেও গায়েবি পদোন্নতি পেয়ে যাচ্ছেন কিছু কর্মকর্তা। যা সরাসরি আইন লঙ্ঘনের শামিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, জ্যেষ্ঠতা তালিকা প্রকাশের বিষয়ে আমাদের ব্যাংকে একটা ঝামেলা চলছে সেটা আমি জানি। এই তালিকা নিয়ে অনেকেরই আপত্তি রয়েছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের চেয়ারম্যান এখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এটা পুরোপুরি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিষয়। জ্যেষ্ঠতা তালিকা বা সিনিয়রিটি লিস্ট নিয়ে পরবর্তীতে যাতে ঝামেলা না হয় সেজন্য আমি একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি।
এ বিষয়ে রাকাবের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজেদুর রহমানের সাথে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও রাকাবের সাবেক ও বিডিবিএল এর বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আলমগীরও কোনো সাড়া দেননি।
অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে বছরের শুরুতে পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিএফার্ম দিয়ে বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৩৮১ শাখার মধ্যে এলপিও, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও বগুড়া শাখাতে বিশেষ নিরীক্ষা শেষে ২৮ কোটি টাকা লোকসান পাওয়া যায়। বাকি ৩৭৬ শাখায় এখনো অডিট পরিচালিত হয়নি। নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, হিসাব মিলছে না প্রায় ৪৮৮ কোটি টাকার। এছাড়াও দেড় শতাধিক কোটি টাকার কোনো হদিস নেই। বিশেষায়িত এই ব্যাংকটির বিপুল অংকের এ টাকা কোথায় গেল, তার কোনো দালিলিক প্রমাণও নেই।
ব্যাংকের লোকসান বিষয়ে জানতে চাইলে রাকাবের চেয়ারম্যান বলেন, নিরীক্ষকদের ২৮ কোটি টাকা লোকসানের তথ্যটি পুরোপুরি ভাবে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বরং ২০১৯ সালের জুন শেষে ৪২ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে রাকাব। ডিসেম্বর শেষে আনুমানিক ১৭ হাজার কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রাকাবের চেয়ারম্যানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিয়োগ এবং বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। চক্রটি শক্তিশালী হওয়ায় নিয়ম ভেঙে একাধিক কর্মকর্তা একই জায়গায় ১০ থেকে ১১ বছর পর্যন্ত কর্মরত রয়েছেন। যা রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের প্রবিধানমালা পরিপন্থী।
নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ হাজার ২২৫ কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করেছে রাকাব। কিন্তু একই সময়ে ঋণ বিতরণ করেছে ৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। যা সরাসরি আইন লঙ্ঘনের শামিল।