স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে বিপুল প্রণোদনা প্যাকেজসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু দেশটিতে বেকারত্বের হার যেন কিছুতেই নামছে না। এখনো মার্কিন বেকারত্বের হার ১০ দশমিক ২ শতাংশ, যা মহামন্দা-পরবর্তী যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। পাশাপাশি দেশটির বিপর্যস্ত দৈনন্দিন জীবন কবে স্বাভাবিক হবে তা বলা যাচ্ছে না। রেস্তোরাঁর মতো সমাগম স্থলগুলোয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে সীমিত পরিসরে। অন্য বিক্রয়কেন্দ্রগুলোকেও মেনে চলতে হচ্ছে একই নিয়ম। একই সঙ্গে মার্কিন নাগরিক জীবন থেকে যেন হারিয়ে গেছে কনসার্ট ও উৎসব আয়োজন। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি সচেতন যে কাউকে বলে দেবে যে দেশটি নিশ্চিতভাবেই অর্থনৈতিক পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু এদিকে জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা বিক্রি বেড়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। গাড়ি বিক্রি বাদে এ বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৯ শতাংশ। মূলত মার্চ ও এপ্রিলে পতনের পর জুলাইয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশটির খুচরা বিক্রি। একইভাবে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে বাড়ি বিক্রির বাজার। সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার হলো, দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনশীলতা ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছে। এ অবস্থায় তৃতীয় প্রান্তিকে ২৬ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথা বলছে আটলান্টা ফেডারেল রিজার্ভ। আর এসব উপাত্তই ধন্ধে ফেলে দিয়েছে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের।
লিউটহোল্ড গ্রুপের চিফ ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট জিম পলসেন বলেন, আমার মনে হয় না যে আমরা মন্দায় রয়েছি। হাতে যেসব উপাত্ত আসছে, তাতে আমার ধারণা, মন্দা এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে এবং আমরা যে আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছি, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর পলসনের কথা যদি সত্যি হয়, তবে এটি হবে মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুত মন্দা থেকে উত্তরণ।
ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ জানিয়েছে, বর্তমান মন্দার শুরু হয়েছিল ফেব্রুয়ারিতে। প্রথম প্রান্তিকে মার্কিন জিডিপির পতন হয় ৫ শতাংশ। এরপর দ্বিতীয় প্রান্তিকে পতন হয় ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ। পরপর দুই প্রান্তিকে জিডিপির ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নিয়ম অনুযায়ী মন্দায় পড়ে দেশটির অর্থনীতি। মূলত বেশকিছু বিষয় কভিড-১৯-এর সংক্রমণজনিত মন্দাকে অন্য মন্দা থেকে পৃথক করছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, এ মন্দা হাজির হয়েছে খুব দ্রুত এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নীতিনির্ধারকদের ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
এ বিষয়ে পলসন বলেন, স্বরূপগতভাবে যেখানে ‘কভিড-১৯ মন্দা’ আলাদা, সেটি হলো মন্দার মতো পরিবেশ থেকে মাত্র দুই প্রান্তিকেই অর্থনীতিতে যুদ্ধকালীন পতন সৃষ্টি হওয়া। পরিস্থিতি সামাল দিতে নীতিনির্ধারকরা তাত্ক্ষণিক বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং এখনো নিচ্ছেন। কিন্তু সাধারণ মন্দার ক্ষেত্রে তারা এমনটি মোটেই করতেন না। তারা এসব পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছেন, কারণ এ মন্দা দেখা দিয়েছে কোনো পূর্বাভাস ছাড়া একেবারেই তাত্ক্ষণিকভাবে; যা আগে আর কখনই দেখা যায়নি।
মূলত মন্দার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের পুনরুদ্ধার তহবিল বিল পাস করে মার্কিন কংগ্রেস। একই সঙ্গে এক ডজনের মতো ঋণ প্রদান ও লিকুইডিটি প্রোগ্রাম চালুর পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি সুদহার কমিয়ে প্রায় শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনে ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)। ফলে এরই মধ্যে হয়তো মন্দার কৌশলগত অবসান হয়েছে। কিন্তু এর মানে এমন নয় যে দেশটি এখন আর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আটকে নেই; বরং সত্যি হলো, প্রকৃত মন্দা এখনো আসতে বাকি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
টিএ লোম্বার্ডের প্রধান ইউএস অর্থনীতিবিদ স্টিভ ব্লিটজ বলেন, একে মন্দা বলা যায় না। আমরা শুধু দুটি ঋণাত্মক প্রান্তিক দেখেছি মাত্র। আর একেই কৌশলগতভাবে মন্দা বলা হচ্ছে। মুডি’স অ্যানালিটিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি বলেন, অর্থনীতি হয়তো কৌশলগত মন্দা কাটিয়ে উঠেছে, কিন্তু পর্যাপ্ত পদক্ষেপ না নেয়া হলে সামনে যথেষ্ট বিপদ রয়েছে।
সুত্র: সিএনবিসি।