গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গত মঙ্গলবার গুলশান থানায় আসে। কিন্তু পুলিশ যথাসময়ে গ্রেফতার অভিযানে যায়নি বলে অভিযোগ করে ব্যাংক। পরে বুধবার অভিযানে নামলেও পরোয়ানাভুক্ত কাউকে বাসায় পায়নি বলে জানায় পুলিশ।
জানতে চাইলে এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আফজাল বলেন, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে নেয়া ঋণ বর্তমানে সুদাসলে ৫৫ কোটি ৬২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। পুরো টাকাই এখন মন্দমানের খেলাপি। তারা টাকা ফেরত না দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বর্তমানে পলাতক। এখন যদি প্রশাসন সহযোগিতা না করে তাহলে আমরা কীভাবে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করব।
তাদের কি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি বলা যায়- এমন প্রশ্নের জবাবে এবি ব্যাংকের এমডি বলেন, অবশ্যই বলা যায়। তারা আমার টাকা নিয়ে পালিয়েছে।
গুলশান থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) কামরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আমরা পেয়েছি। কিন্তু তারা অনেক আগেই বিদেশে চলে গেছেন।
গড়িমসির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে সবাই অভিযোগ করেন, বাস্তবতা বুঝতে চায় না। যেহেতু তারা বাসায় নেই মঙ্গলবার গেলেও তো গ্রেফতার করা সম্ভব হতো না। বুধবার আমরা তাদের বাসায় গিয়ে শুধু সাবেক মন্ত্রীকেই পেয়েছি। তাকে ওয়ারেন্টের কথা বলে এসেছি।
এবি ব্যাংক থেকে পাঠানো তথ্যে দেখা যায়, ২০১৩ ও ১৪ সালে ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখা থেকে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ঋণ নেয় লতিফ সিদ্দিকীর পরিবার। ধলেশ্বরী ও মেজেস্টিকা হোল্ডিং লিমিটেডের নামে বিপুল অংকের এ ঋণ নেয়া হয়।
দীর্ঘদিন ঋণ পরিশোধ না করায় বর্তমানে তা ৫৫ কোটি ৬২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ধলেশ্বরী লিমিটেডের চেয়ারম্যান লতিফ সিদ্দিকীর স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তার ছেলে অনিক সিদ্দিকী এবং পরিচালক তার মেয়ে রাইনা ফারজিন। একইভাবে মেজেস্টিকা হোল্ডিং লিমিটেডেরও চেয়ারম্যান লায়লা সিদ্দিকী এবং এমডি অনিক সিদ্দিকী।
দীর্ঘদিন ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সম্প্রতি ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখা উভয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এনআই অ্যাক্টে মামলা দায়ের করে। এরপর গত বছরের ২ ডিসেম্বর তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন বিজ্ঞ আদালত। সেই পরোয়ানা হাতে নিয়ে বুধবার ঋণখেলাপিদের ধরতে তাদের গুলশানের বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ।
কিন্তু তাদের বাসায় পাওয়া যায়নি। এরা শুধু এবি ব্যাংকের ঋণখেলাপি নয়, তারা জনতা ব্যাংক এবং পদ্মা ব্যাংকেও বিপুল অংকের ঋণ খেলাপি বলে জানা গেছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে ধলেশ্বরী ও মেজেস্টিকা হোল্ডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অনিক সিদ্দিকীর সঙ্গে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। এরপর ফোন করার কারণ উল্লেখ করে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও এই প্রতিবেদন ছাড়ার আগ পর্যন্ত কোনো জবাব আসেনি।